কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমছে, দুর্ভোগ কমেনি

ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে এখনো প্লাবিত আছে নিম্নাঞ্চল। শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সুখের চর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করলেও প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট, চিলমারী ইউনিয়ন ও রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল বন্যার পানিতে এখনো ডুবে আছে।

তকে এক সপ্তাহের তুলনায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো পানিবন্দী আছে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার। এসব চরাঞ্চলে কৃষকের বীজতলা, শাকসবজি ও রোপা আমন ধানখেত পানির নিচে তলিয়ে আছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গোখাদ্য ও জ্বালানি-সংকট দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, আজ রোববার সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সব নদ-নদীর পানি সমতলে কমছে।

রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, পাঁচ দিন থেকে তাঁর বাড়িতে পানি। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছেন। সেই সঙ্গে গবাদিপশুর খড় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বানের পানি দ্রুত নেমে না গেলে জমানো খড় শেষ হবে। তখন গরু নিয়ে বিপদে পড়তে হবে।

আজ সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রৌমারী উপজেলার ফলুয়ারচর, পালের চর, গোয়ালের চর, খেরুয়ারচর, সুখেরবাতি, ধনারচর, রাজীবপুর উপজেলার চর সাজাই, ডাটিয়ারচর, কোদালকাটি, শংকর মাধবপুর, বড়চর, সাজাই মণ্ডলপাড়ার প্রায় ২৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে এখনো প্লাবিত অবস্থায় আছে।
রৌমারী উপজেলার ফলুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সবুর বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ প্লাবিত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করছে।

আরও পড়ুন
পানি কমতে শুরু করলেও বাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সুখের চর এলাকায়

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়ন, সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন, চিলমারী উপজেলার চিলমারী সদর ইউনিয়ন, অষ্টমীর চর ইউনিয়নের মানুষের জ্বালানি ও খাদ্য-সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশুর খাদ্য-সংকট নিয়ে কৃষকেরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

উলিপুর উপজেলার মাঝের আলগার চরের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, এক সপ্তাহ থেকে তাঁর বসতবাড়িতে বন্যার পানি উঠে আছে। জ্বালানির জন্য কাঠখড়ি যা ছিল সব শেষ, শান্তিমতো রান্না করে দুবেলা খাবেন, সেটারও উপায় নেই।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, জেলায় ৫ হাজার ৬৮৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে আছে। বন্যার পানির স্রোতে জেলার পাঁচটি স্থানে ৭৮০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ৫ হাজার ২৮০টি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। জেলায় বন্যার্ত মানুষের জন্য ১৮টি স্থায়ী ও ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ২৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত আছে। গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ মজুত রয়েছে।

আরও পড়ুন