চুয়াডাঙ্গায় একই বাজারে ৪৫ টাকা কেজি বেগুন কিনে ৮০ টাকায় বিক্রি
চুয়াডাঙ্গার হাটবাজারগুলোতে এবার ভরা মৌসুমেও শীতকালীন সবজির দাম বাড়তি। সবজি কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। সবজির বাজারদর নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা পাইকারদের এবং পাইকাররা কৃষকদের দোষারোপ করছেন। আবার কৃষকদের দাবি, উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়ছে, সেই তুলনায় সবজির দাম বাড়েনি।
গত মৌসুমের তুলনায় এবার কম জমিতে সবজি উৎপাদন, জেলার বাইরে থেকে আসা মহাজনদের কাছে খেতের সবজি লট ধরে বিক্রির সুযোগ এবং খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় উৎপাদিত সবজির দাম বাড়তি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর সেখানে আবাদ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গার মাঠ থেকে সরাসরি ট্রাকে করে বিপুল পরিমাণ সবজি জেলার বাইরে চলে যাচ্ছে। খেতে বসেই চাষিরা বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন, যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বড়বাজার নদীর পার সবজিপট্টিতে গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকটি আড়ত ঘুরে অন্তত ১৫ জন সবজিচাষির সঙ্গে কথা হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের রংপুর গ্রামের তোতা মিয়া এক মণ বেগুন নিয়ে আসেন বাজারে। প্রতি কেজি বেগুন গড়ে ৪৫ টাকা টাকা দরে বিক্রি করেন। একই বাজারের খুচরা বিক্রেতা রবিউল ইসলাম সেই বেগুন ভোক্তার কাছে খুচরা বিক্রি করেন প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। ১ কেজি বেগুনের দাম ৮০ টাকা চাওয়ায় একজন ক্রেতার সঙ্গে দোকানদার রবিউল ইসলামের বেশ উচ্চবাচ্যও হলো।
৪৫ টাকা কেজিতে কেনা বেগুন কেন ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে বৃষ্টির কারণে আজ (বৃহস্পতিবার) সবজির আমদানি কম, তাই দাম বেশি। প্রতিদিন যে পরিমাণ সবজি পাইকারি কেনা হয়, তার একটা অংশ অবিক্রীত থেকে যায় ও নষ্ট হয়। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এমন দামে বিক্রি করতে হয়।’
ওই বাজারে প্রতি কেজি ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৩৫-৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১২০ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, শিম মানভেদে ৫০-৬০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৪০–৫০ টাকা, রসুন ২৬০–৩০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০–৮০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০–৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ইমরান বাণিজ্যালয় নামের আড়তের মালিক মো. শাহ আলম জানান, তিনি গতকাল সকালে পাইকারিতে প্রতি কেজি ফুলকপি ২৫–৩০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৩৫–৪৫, কাঁচা মরিচ ৬৫–৭০, পেঁপে মানভেদে ১০–২০ টাকা, টমেটো ২০–৩০ টাকা, শিম ২৫–৩০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বিক্রির রসিদও দেখান তিনি।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় বুধবারের তুলনায় প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা।
সবজিচাষিদের ভাষ্য, গত বছর শীতকালীন সবজির আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় এবার চাষ কমিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সবজিচাষি তোতা মিয়া জানান, গত বছর আড়াই বিঘা জমিতে বেগুন, করলা, টমেটো, ঝিঙে ও ঢ্যাঁড়স আবাদ করলেও এবার শুধুই বেগুন আবাদ করেছেন।
সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের সবজিচাষি ইনারুল হক গত বছর সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ১২ রকম সবজির আবাদ করেন। এবার তিনি মাত্র পাঁচ কাঠা জমিতে লাউ, সাত কাঠা জমিতে বেগুন এবং সাত কাঠা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, বাইরে থেকে মহাজনেরা এসে খেত থেকেই প্রতিটি লাউ ৪০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে যা ৫–৮ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ডোমচারা গ্রামের রশিদুল ইসলাম গত বছর দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ১ বিঘা জমিতে মরিচ, ১০ কাঠায় আলু ও ১০ কাঠায় টমেটোর আবাদ করেছিলেন। এ বছর সেখানে মাত্র ১ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও ১৫ কাঠা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। রশিদুল ইসলাম বলেন, আশপাশের জেলায় সবজির আবাদ তেমন হয়নি। তাই ওসব জেলা থেকে মহাজনেরা খেতে এসেই বাড়তি দামে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে বাজারে তোলার আগ্রহ কমে গেছে।
শীতকালে সবজি বাড়তি দামে বিক্রির ঘটনাকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন শরিয়ত উল্লাহ নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, উৎপাদনকারী কৃষক যে দামে সবজি বিক্রি করছেন, ভোক্তারা প্রায় দ্বিগুণ দামে তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।