পদ্মায় নিঃস্ব হয়েও মনোবল হারায়নি আসিফ, পেল জিপিএ–৫

মা–বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আসিফ প্রামাণিক। রোববার দুপুরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের স্বরূপারচক গ্রামে
ছবি: এম রাশেদুল হক

তিন বছর আগে পদ্মা নদীর ভাঙনে আসিফ প্রামাণিকদের ভিটেমাটি ও ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনে সব বিলীন হলেও মনোবল ভাঙেনি আসিফের। অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে সে। এ বছর আসিফ এসএসসি পরীক্ষায় দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার এ সাফল্যে পরিবারের সদস্যেরা খুশি। তবে তার লেখাপড়া চালানোর বিষয়ে দুশ্চিন্তাও আছে।

বর্তমানে আসিফ প্রামাণিক ও তার পরিবারের সদস্যেরা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের স্বরূপারচক গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন সরদারের কাছ থেকে চার শতাংশ জমি বার্ষিক চার হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তাঁদের নদীতে বিলীন হওয়া ভিটেমাটি ছিল দৌলতদিয়ার লালু মণ্ডলপাড়ায়।

আসিফের বাবা বাদশা প্রামাণিক দৌলতদিয়া ঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। মা–বাবা, দুই বোন, দুই ভাইসহ ছয় সদস্যের পরিবার। বাবার সামান্য আয়ে সংসার চলে টানাপোড়েনে। এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে নিজের পড়াশোনা সামলে আসিফও টিউশনি করে পরিবারকে সহযোগিতা করে।

গতকাল রোববার দুপুরে আসিফদের বাড়িতে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি টিনের ছাপরা। ঘরের এক পাশে থাকে আসিফ, আরেক পাশে দুই ভাইবোনকে নিয়ে থাকেন তাঁর মা–বাবা। মায়ের কোলে সবার ছোট ছেলে আহাদ। আসিফের মা আসমা বেগমের চোখে আনন্দাশ্রু। তিনি বলেন, পরিবারের সবার বড় আসিফ। এরপর মেয়ে দীপা, পড়ে দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে। অভাবের কারণে সে দৌলতদিয়ার মুন্সিবাজারে নানাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। আরেক মেয়ে দিয়া প্রথম শ্রেণিতে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। সবার ছোট আহাদ এখনো বিদ্যালয়ে যায় না।

আসিফ প্রামাণিক
ছবি: প্রথম আলো

আসমা বেগম বলেন, এত কষ্টের মধ্যে ছেলে এ প্লাস পেয়েছে, এ জন্য তিনি খুশি। পরীক্ষার আগে ছেলেকে ভালো কিছু খাওয়াতে পারেননি। অথচ তাঁদের জমি ছিল, বাড়ি ছিল, ভিটেমাটি ছিল। তিন বছর আগে নদীভাঙনে সব বিলীন হয়ে এখন তাঁরা নিঃস্ব।

আসিফের বাবা বাদশা প্রামাণিক বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন ঝালমুড়ি বিক্রি করে যে আয় হতো, তা দিয়ে ভালোই চলত। সেতু চালুর পর গাড়ি ও যাত্রী না থাকায় বেচাকেনা তেমন নেই। তিন দিন পর এক দিন বিক্রির সুযোগ পান। দিন শেষে ৩০০-৪০০ টাকার মতো থাকে। তা দিয়ে কোনোভাবে দিন পার করছেন।

বাবার পক্ষে সংসারের খরচ জোগানো অনেক কষ্টের বলে জানায় আসিফ প্রামাণিক। সে জানায়, বিভিন্ন কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার হিসেবে যে অর্থ পেত, তা পড়াশোনার কাজে লাগাত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও সহযোগিতা করেছেন। পড়াশোনা শেষ করে সে চিকিৎসক হতে চায়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন