আওয়ামী লীগে ১৫ মনোনয়নপ্রত্যাশী, ছাড়ের আশায় ‘তৃণমূলে’ সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১৫ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া প্রয়াত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাইনুল হাসান ভিড়েছেন তৃণমূল বিএনপিতে। তিনি আশা করছেন, তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচনী সমঝোতা’ হলে তিনি এই আসনে ছাড় পাবেন।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে তৎপরতা শুরু করেছেন জাতীয় পার্টির টানা দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। আসনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জেটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ। তিনি হলেন সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান ধানের শীষ প্রতীকের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী।

আরও পড়ুন

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আনসারী, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ঢাকা ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিউল্লাহ মিয়া, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তানবীর হোসেন, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ উদ্দিন, জাপানপ্রবাসী আবু শামিম মোহাম্মদ পিয়ার ও মো. জালাল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনটি সরাইল উপজেলার নয়টি এবং আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে বর্তমানে মোট ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭২। এর মধ্যে সরাইলে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৫ ভোট। আশুগঞ্জে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৬৭ ভোট।

আরও পড়ুন

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। গত ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর ৫ নভেম্বর আবারও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধাকে ২৪ হাজার ৪৬৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে।

জিয়াউল হক মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আমিই হব জোটের প্রার্থী। এর আগে আমি জোটের প্রার্থী হয়ে দুবার নির্বাচিত হয়েছি। জোটের প্রয়োজনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতেও আমার কোনো আপত্তি নেই।’

প্রয়াত সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাইনুল হাসান ৫ নভেম্বর উপনির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভ করেছিলেন। তিনি ওই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। এবার তিনি নতুন রাজনৈতিক দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। মাইনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের একটি নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে। এ আসনে আওয়ামী লীগ তাঁকে ছাড় দিতে পারেন বলে তিনি মনে করছেন।

আরও পড়ুন

এদিকে এলাকায় আলোচনা আছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী। তবে জোটের গুঞ্জন নাকচ করে দিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার আমরা কোনো জোটেই নেই। আমাদের প্রতীক মিনার। আমরা নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেব।’ তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ১৫০টি আসনের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনের প্রার্থী হবেন মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী।