সেন্ট মার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকেরা চার দিনেও ফিরতে পারলেন না
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় আজ শুক্রবারও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বহাল রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ কারণে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে চার দিন ধরে আটকে পড়া সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটকের আজও ফেরা সম্ভব হয়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ৩ নম্বর সতর্কসংকেত বলবৎ থাকায় পর্যটকদের ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আটকে পড়া পর্যটকদের যাতে কোনো অসুবিধায় পড়তে না হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩ নম্বর সতর্কসংকেত প্রত্যাহার হলেই আটকে পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হবে।
তবে দ্বীপে পণ্যবাহী ট্রলার যাওয়ায এখন পণ্যসংকট কেটেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ওসি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছিল। এ অবস্থায় খাদ্য পণ্যভর্তি তিনটি ট্রলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাওয়ার অনুমতি দেয় স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্রলার তিনটি সেন্ট মার্টিনে পৌঁছায়। এখন খাদ্যসংকট কেটে গেছে।
মুজিবুর রহমান আরও বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রায় দুই শতাধিক মানুষও পারিবারিক কাজে গিয়ে টেকনাফে আটকে পড়েছেন। তাঁরা দ্বীপে ফিরতে পারছেন না।
দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকদের মধ্যে বেশ কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীও রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩ শিক্ষকসহ ৭৭ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন এবং নীলফামারী মেডিকেল কলেজের ৩৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটকে পড়া পর্যটকদের মধ্যে থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. সেলিম হোসেন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দ্বীপে আটকা পড়েন সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটক।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, আজ সকালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রচণ্ড রোদ দেখে পর্যটকেরা মালপত্র নিয়ে ঘাটে আসেন। প্রায় দুপুর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন তাঁরা। তবে জাহাজ চলাচল না করায় তাঁরা পুনরায় হোটেলে ফিরে যান।
আটকে পড়া পর্যটক ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সরোয়ার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনন্দ করতে দ্বীপে এসে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পর্যটকদের মধ্যে একদিকে ফেরার তাড়া, অন্যদিকে দ্বীপে অবস্থান করার ভয় দুটিই কাজ করছে।’