হঠাৎ বন্ধ রূপসার খেয়াঘাট, নদী পার হতে পারছেন না কেউ
খুলনার রূপসা খেয়াঘাট। পূর্বে রূপসা উপজেলা ও বাগেরহাট আর পশ্চিমে খুলনা শহর। বর্তমানে রূপসা ফেরিঘাটের কর্মচঞ্চলতা কমলেও এখনো সেখানে দিনরাত চলে নদী পারাপারের খেয়ানৌকা। তবে হঠাৎ গতকাল শুক্রবার রাত থেকে বাঁশ, কাঠ ও বোর্ড দিয়ে আড়াআড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঘাটের প্রবেশপথ। এতে রূপসা ও বাগেরহাটের দিক থেকে কেউই খুলনায় যেতে পারছেন না।
খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই খেয়াঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে খেয়াঘাটে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে লেখা হয়েছে, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে খেয়া পারাপারে এক টাকা ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে ঘাট বন্ধ।’ পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ খেয়াঘাট বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আমি তো রাজনীতিও করি না। সাধারণ মানুষ, খেটে খাই। কাজে যেতে না পারলে আজ বাজার হবে না, খাওয়া হবে না। আমাগো দোষটা কী, একটু বলবেন?
চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই ঘাট পার হয়ে খুলনা শহরে যাতায়াত করেন। ২৪ ঘণ্টাই এই ঘাটে খেয়ানৌকা চলাচল করে। তবে আজ শনিবার সকাল থেকে কেউ এই ঘাট দিয়ে নদী পার হতে পারছেন না। আজ সকাল থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মীকে খেয়াঘাটে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
খেয়াঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে রূপসা সেতু দিয়েও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষকে পার হতে দিচ্ছেন না বলে অনেকে এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন। বাগমারা এলাকার এক ব্যক্তি সকাল থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা রূপসা ঘাটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে তিনি বাইসাইকেল নিয়ে সেতু পার হওয়ার চেষ্টা করে সেখানেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত আবার ফিরে এসেছেন আবার রূপসা ঘাটে। দুর্ভোগের কথা বললেও নিজের নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি এই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এমন হলে কীভাবে হবে! আমি তো রাজনীতিও করি না। সাধারণ মানুষ, খেটে খাই। কাজে যেতে না পারলে আজ বাজার হবে না, খাওয়া হবে না। আমাগো দোষটা কী, একটু বলবেন?’
পাশেই কোলে শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইলাইপুর এলাকার রোমান। তিনি বলেন, ‘ঘাট বন্ধ, সেটা তো জানি না। আমার ছোট ভাই অসুস্থ, খুলনা মেডিকেলে ভর্তি। সকালের নাশতা নিয়ে বেরিয়েছি। কিন্তু যেতে পারছি না। এই ছোট বাচ্চা নিয়ে কতক্ষণ দাঁড়ায় থাকা যায়। রাজনীতি দিয়ে কী হবে, যদি বাঁচতেই না পারি।’
আলাপের ফাঁকে সকাল নয়টার দিকে দেখা যায়, এক ব্যক্তি এসে সম্পূর্ণভাবে ঘাটের প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় একটি ব্যানার। সেখানে লেখা, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে খেয়া পারাপারে এক টাকা মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে সর্বসম্মতভাবে ২৪ ঘণ্টা ঘাট বন্ধ থাকবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ইঞ্জিনচালিত নৌকা মাঝি সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ব্যাপারী বলেন, ‘যখন তেলের দাম ৫০ টাকা লিটার, তখনো এই ঘাটে আমরা ৩ টাকায় পার করছি। এখন ১১০ টাকা তেলের লিটার, এখনো আমাদের ভাড়া সেই ৩ টাকা। এতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারছি না। তাই ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে আমরা এই ধর্মঘট পালন করছি।’
তবে বিএনপি নেতাদের মতো সাধারণ মানুষও এই অজুহাত মানতে নারাজ। তাঁদের ধারণা, খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস-লঞ্চসহ অন্যান্য যানের মতো খেয়াঘাট বন্ধ করে নদী পারাপার বন্ধ করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মতো এই ঘাটে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বাগেরহাট সদরের পূরণ বাজারে এলাকার ছাত্রদলের কর্মী মো. সাহেব বলেন, তিনি ভোররাতে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। ভেঙে ভেঙে তিনি রূপসা ঘাটে এসেছেন। নদী পার হয়ে খুলনায় যাবেন বলে ঘাটে এসেছিলেন। তবে ঘাট বন্ধ থাকায় এখন অন্য পথে খুলনা যাওয়ার চেষ্টা করছেন।