সংঘাতের ঘটনায় কেন বারবার ছাত্রলীগের নাম আসে

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকসভা শেষে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে গতকাল রোববার মারামারি হয়
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি ও সংঘাতের ঘটনায় প্রায়ই খবরের শিরোনাম হন। সবশেষ গতকাল রোববার শোকসভা শেষে দলীয় কর্মীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। ছুরিকাঘাতে আহত হন একজন কর্মী।

বারবার কেন এমন হয়, তা নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত আট বছর ধরে একাধিক আংশিক কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি কখনোই হয়নি। এতে ত্যাগী নেতারা পদ পাচ্ছেন না। কিছু কর্মী পদে থাকা নেতাদের অনুসারী হয়ে বিভিন্ন সময় অন্তকোন্দলে জড়াচ্ছেন তাঁরা। আবার কেউ কেউ ক্ষমতার দাপট দেখাতে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাচ্ছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে, তাহলে নিজেদের মধ্যেই ঘটনা ঘটে। এটা চলতে পারে না। সংগঠনে কমান্ড সিস্টেম থাকতে হবে, তা না হলে বিশৃঙ্খলা হবে। রাজনীতিতে ব্যালান্স থাকা দরকার, সেটার অভাবেই এমনটা হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই। এ কারণে সবাই অপ্রতিরোধ্য। সে ক্ষেত্রে যাঁরা দায়িত্বশীল, তাঁরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩১ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৪ পদের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছরের জন্য এই কমিটির অনুমোদন দেয় তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। কমিটিতে আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল সিদ্দিকীকে সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের নাসিম আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গত ৩১ জুলাই এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এই এক বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ২০১৫ সালের পর অন্তত তিনটি আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কোনো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেনি। সবশেষ ২৪ সদস্যের কমিটিও একই পথে হাটছে। এ কারণে অনেক নেতা হতাশা প্রকাশ করছেন।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, বর্তমান কমিটির সময় প্রতি মাসেই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে, যার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ ওঠে ১২ ফেব্রুয়ারি নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে র‌্যাগিংয়ের নামে রাতভর নির্যাতন করার ঘটনায়। দেশজুড়ে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সানজিদা আক্তারসহ পাঁচ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয় সংগঠন।

এ ছাড়া গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রাধাক্ষ্যকে লাঞ্ছিত করে কক্ষ ভাঙচুর, গাড়িচালককে মারধর, ছাত্রীকে হেনস্তা, ক্লাসে বসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মারধর, মোটরসাইকেল ঢুকতে না দেওয়ায় নিরাপত্তাকর্মীকে লাঞ্ছিত, বাবাকে কমিটিতে না রাখায় কর্মকর্তা সমিতির নেতাকে লাঞ্ছিত, ছাত্র নির্যাতন, খাবার দিতে দেরি করায় দোকানদারকে মারধর, আবাসিক ছাত্রকে হল থেকে বের করে দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ ওঠেছে।

যদিও নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন, ক্যাম্পাসকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত করা, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়সহ শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পদ পাওয়া নেতারা। এ ক্ষেত্রে তেমন সাফল্য নেই তাঁদের।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী বলেন, যাঁরা ছাত্রলীগ করে, তাঁরা সব সময় ভালো কাজে সম্পৃক্ত থাকেন। এই এক বছরেও অনেক ভালো কাজ করা হয়েছে। আর যে কয়েকজন বিশৃঙ্খলা করেছেন, সংগঠনবিরোধী কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাঁরা এই ধরনের কাজ করেন, তাঁরা ব্যক্তিগতভাবেই করেন। দলের হয়ে করেন না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ইতিমধ্যে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বরে কমিটি অনুমোদিত হবে।