সিলেটে বাক্স ভেঙে দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে

সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসনিক ভবন থেকে দরপত্রের ভাঙা বাক্সটি উদ্ধার করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসনিক ভবন থেকে দরপত্রের বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাঁতী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। পরে ওই বাক্স ভেঙে ভেতরে থাকা দরপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। বাক্সে কতটি দরপত্র ছিল, তা জানা যায়নি।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দরপত্র জমা দিতে আসা এক ব্যবসায়ীকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। তবে পুলিশ বলছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ধরনের স্ক্যাপ মালামাল (যেখানে যে অবস্থায় আছে) বিক্রি করার জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওপেন টেন্ডারিং মেথডের (ওটিএম) মাধ্যমে দরপত্র বিক্রির শেষ তারিখ ছিল গতকাল মঙ্গলবার। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। পরে বেলা তিনটায় প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান (বাণিজ্যিক) কার্যালয়ে দরপত্রের বাক্স খোলার কথা ছিল।

দরপত্রে অংশ নেওয়া মেসার্স হাজী আব্দুল করিম অ্যান্ড সন্সের মালিক আবদুল ওয়েস বলেন, তিনি গত সোমবারে দরপত্রের কাগজ কিনেছিলেন। আজ সকালে জমা দেওয়ার জন্য কার্যালয়ে যান। যাওয়ার পরই সেখানে বিভিন্নভাবে বাধার মুখে পড়েন। সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাঁতী লীগের ৩০-৩৫ জন লোক ছিলেন। তবে তিনি কৌশলে বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাক্সে কাগজ ফেলে দেন।

কিছুক্ষণ পরই যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগের নেতারা দরপত্রের বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ সময় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল ইসলাম চৌধুরী, সদস্য পারভেজ আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমদ শাহ, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রেজান আহমদ শাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈমুর রহমান, উপজেলা তাঁতী লীগের সদস্যসচিব রাসেল আহমদ শাহসহ প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী ছিলেন। এ সময় নেতা-কর্মীরা তাঁকে (আবদুল ওয়েসকে) একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন। পরে প্রায় দুই ঘণ্টা পর ওই কক্ষ থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন

আবদুল ওয়েস আরও বলেন, তাঁর জানামতে, ৬৯টি দরপত্রের কাগজ বিক্রয় হয়েছিল। দরপত্রের বাক্সটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে ১০-১৫টি দরপত্র জমা পড়তে পারে। পরে দরপত্রের বাক্সটি ভাঙা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বক্সে কোনো দরপত্র ছিল না।

আবদুল ওয়েস আরও বলেন, প্রায় ১৮ বছর ধরে তিনি ঠিকাদারি কাজ করছেন। তবে আজকের ঘটনার পর তিনি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমদ শাহ বলেন, আবদুল ওয়েস দরপত্রের বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় অন্য ঠিকাদারেরা ওয়েসকে আটকে দেন। তিনি ওই সময় শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির ক্যানটিনে চা খাচ্ছিলেন। গন্ডগোলের কথা শুনে এগিয়ে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। ক্যানটিনে কেন গিয়েছিলেন জানতে চাইলে বলেন, এক ছোট ভাইয়ের ঝামেলার কথা শুনে গিয়েছিলেন।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির কার্যালয়ের বাইরে ব‌হিরাগতদের অবস্থান। বুধবার সকালে
ছ‌বি: সংগৃহীত

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রেজান আহমদ শাহর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী আতাউর রহমান বলেন, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের এক কর্মকর্তা ফোন দিয়ে জানান, সেখানে ঝামেলা হয়েছে। পরে সেখানে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ হোসাইনসহ একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।

আরিফ হোসাইন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তেমন কোনো ঝামেলা দেখতে পাননি। ওই ঠিকাদারকেও তিনি চেনেন না। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করেনি।

বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার আগে সেখানে কয়টি দরপত্রের কাগজ জমা পড়েছিল, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি থেকে দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য কতজন ফরম কিনেছিলেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি জানতে প্রতিষ্ঠানের হিসাব ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষক এস এম আবদুল বারিকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দরপত্র কতটি বিক্রি হয়েছে তিনি জানেন না। তিনি সে সময় ছুটিতে ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও উপমহাব্যবস্থাপক এ টি এম বাকীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এ টি এম বাকী বলেন, কয়টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে, এ তথ্য প্রশাসন বিভাগে থাকে না। বিষয়টি হিসাব শাখা বলতে পারবে।

আরও পড়ুন

দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিয়াবুল হাসানের মুঠোফোন একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও উপমহাব্যবস্থাপক এ টি এম বাকী প্রথমে বলেন, দরপত্রের বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরে দরপত্রের ভাঙা বাক্সের ছবির কথা জানালে তিনি বলেন, দরপত্র জমা নিয়ে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এই জন্য এ নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। বিশৃঙ্খলা হওয়ায় দরপত্র বাক্স খোলা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।