উদ্বোধনের পর পিরোজপুরের বঙ্গমাতা সেতুতে মানুষের ঢল
পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের পর এটি দেখতে মানুষের ঢল নেমেছে। আজ রোববার বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই হেঁটে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেতু। মুহূর্তেই কচা নদীর দুই প্রান্তের হাজারো মানুষের ভিড়ে সেতু মুখর হয়ে ওঠে।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নৈকাঠি গ্রামের আবদুস সালেক মোল্লা (৬৫) নাতি তসলিমকে (১১) নিয়ে সেতু দেখতে এসেছেন। আবদুস সালেক মোল্লা বলেন, নাতি সেতু দেখবে, সেতুতে উঠবে। তাই সকাল থেকে সেতুর পূর্ব প্রান্তে এসে বসে ছিলেন। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর সেতু খুলে দেওয়া হয়। এরপর নাতিকে নিয়ে সেতু ঘুরে দেখেছেন।
কৃষক আবদুস সালেক মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন দূর থেইক্যা সেতু দেখছি। কাছে যাইবার পারি নাই। আজ সেতুতে উইঠা ঘুরলাম। নাতি মোবাইলে ফটো তুলছে। কত কষ্ট কইরা নদী পাড়ি দিয়ে পিরোজপুর, বাগেরহাট যাইতাম। এহন মোগো কষ্ট শেষ। সেতু কইরা দেওয়ায় শেখের বেটিকে মন খুলে দোয়া করছি।’
বেলা ১১টার আগে থেকেই সেতুর দুই প্রান্তের (সদর ও কাউখালীর বেকুটিয়া) কয়েক হাজার মানুষ অপেক্ষা করছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর সেতুতে মানুষকে হেঁটে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে যান চলাচল রাত থেকে শুরু হবে। সেতু নিয়ে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।
সদর উপজেলার টোনা গ্রামের মৌসুমী মজুমদার (২৬) ১০ কিলোমিটার দূর থেকে মেয়েকে নিয়ে সেতু দেখতে এসেছেন। সেতুর ওপরে কথা হয় মৌসুমীর তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে সেঁজুতির (৮) সঙ্গে। সেঁজুতি বলে, ‘মাকে বলেছিলাম, সেতু দেখতে যাব। মা আমাকে সেতু দেখাতে নিয়ে এসেছে। এটা (বঙ্গমাতা সেতু) আমাদের পদ্মা সেতু।’ এ সময় মেয়ের সঙ্গে মৌসুমী মজুমদার বলেন, পদ্মা সেতু যেমন পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু ছিল। বঙ্গমাতা সেতুও তাঁদের কাছে পদ্মা সেতুর মতো।
সকাল ৯টায় সেতুর দুই প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের সঞ্চালনায় সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল, পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান প্রমুখ। সেতুটি উদ্বোধনের পর দুজন শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানায়।
অন্যদিকে সেতুর পূর্ব প্রান্তে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. খালেদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান, ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।