খেলনা আর বই-খাতা এখন কেবলই স্মৃতি
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামের সৌদিপ্রবাসী সফিকুল ইসলামের ছয় বছরের মেয়ে সায়মা সুলতানার লেখাপড়া আর খেলনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। বই আর খেলনা নিয়ে কাটত তার দিন। সঙ্গী ছিল দুই বছর বয়সী ছোট বোন রাইছা আক্তার। বই, খাতা আর খেলনাগুলো এখন কেবলই স্মৃতি। সড়ক দুর্ঘটনায় মা শাহীনুর আক্তার (২৪) ও নানি দিলবর নেছার (৫৫) সঙ্গে মারা গেছে তারা।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মালিখিল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দিলবর নেছার বাড়ি উপজেলার কদমতলী গ্রামে। তাঁর মেয়ে শাহীনুরের স্বামীর বাড়ি একই উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামে। সড়ক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যুতে দুটি গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কদমতলীতে দিলবর নেছার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে আটটায়। আর শাহীনুর আক্তার ও তাঁর দুই মেয়ের জানাজা হয় দড়িকান্দি গ্রামের বালুর মাঠে বেলা ১১টায়।
সন্ধ্যায় শাহীনুরের স্বামীর বাড়িতে গিয়ে মাতম দেখা যায়। শাহীনুর ও তাঁর শিশু মেয়ের হঠাৎ মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনেরা। কাঁদছিলেন ননদ সালমা আক্তার, শাহিনা আক্তার, রাশেদা আক্তার, রোশনা আক্তার। শাহীনুরের শ্বশুর আবদুর রশিদ মোল্লা বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে সফিকুল ইসলামের ঘরের দুই নাতনি আমার অত্যন্ত আদরের ছিল। তাদের হঠাৎ মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’
সায়মা ও রাইসার চাচি খাদিজা আক্তার সায়মার হাতের লেখার খাতা হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার ছেলে রাফি ও সাফি পড়তে বসলে সায়মা পড়তে বসত। তাদের সঙ্গে সায়মাও স্কুলে যেত। বলত, “বড়মা আমিও পড়ব, আমিও স্কুলে যাব।”’
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাহীনুর আক্তার তাঁর দুই মেয়ে সায়মা আক্তার, রাইছা আক্তারকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য মা দিলবর নেছাকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে কুমিল্লায় রওনা দেন। চিকিৎসক দেখিয়ে রাতে বাড়ি ফেরার পথে মহাসড়ক পারাপারের সময় ঢাকাগামী একটি বাসের চাপায় একই পরিবারের চারজনই মারা যান।
দিলবর নেছার একমাত্র ভাই তিতাস উপজেলার ঘোষেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘সকালে কদমতলী গ্রামে বোনের জানাজায় অংশগ্রহণ করেছি। বেলা ১১টায় ভাগনি শাহীনুর আক্তার, ভাগনির মেয়ে সায়মা ও রাইছার জানাজায় অংশগ্রহণ করলাম। একসঙ্গে চারজনের জানাজায় অংশগ্রহণ করা কতটা বেদনার, তা বোঝাতে পারব না।’