৯ দিন পরও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার হননি, প্রতিবাদে ৭ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

বগুড়ায় আইএইচটির অধ্যক্ষের অপসারণ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার গ্রেপ্তার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের সাতমাথা-বনানী সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়েরের ৯ দিন পরও আসামি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সজলকে গ্রেপ্তার এবং প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে আজ রোববার প্রায় ৭ ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা শহরের সাতমাথা-বনানী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজট। পরে বিকেলের দিকে কিছু যানবাহন চলা শুরু করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, আসন-বাণিজ্য, মাদক সেবন ও পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে সজলের বিরুদ্ধে। সজলকে আসামি করে ২ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন বগুড়া আইএইচটির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করা বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন। অথচ দাবি আদায়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমনকি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুর ১২টার দিকে আইএইচটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে সাতমাথা-বনানী শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সড়কে বেঞ্চ রেখে, বাঁশ ও লাঠি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে অবরোধ। শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শুরু করে কলোনি পর্যন্ত শতাধিক বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রে বিকেলে রোগীদের ঢল নামে। বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসক দেখাতে আসেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা আইএইচটি শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে পড়েন।

বেলা তিনটায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক থেকে আসা রোগী জিনাত সুলতানা (৪০) বলেন, ‘চিকিৎসক দেখাতে এসেছি। এক ঘণ্টা ধরে অবরোধের মুখে আটকা পড়েছি। রোগী বহনকারী যানবাহনও পারাপার হতে দেওয়া হচ্ছে না।’ ইজিবাইকচালক মজনু মিয়া বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে সড়ক অবরোধ। পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরানোর উদ্যোগ নেই। সাত ঘণ্টা গাড়ির চাকা ঘোরে না। রোজগারও বন্ধ।’

আবরোধের কারণে ভোগান্তি পোহান নগরবাসী। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। লোকজন হেঁটে চলাচল করেন
ছবি: প্রথম আলো

আইএইচটির এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশ শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনের খেলায় মেতেছে। সজল ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা নিতে চায়নি থানা-পুলিশ। পরে চাপে পড়ে নিলেও এখন গ্রেপ্তারে গা ছাড়া ভাব পুলিশের। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় সজল এখনো অধরা। উল্টো আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হুমকি ও ভয় দেখানো হচ্ছে।

তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, তিন দফা দাবি আদায় হলেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। এই দাবির মধ্যে আছে ছাত্রলীগ নেতা সজলকে গ্রেপ্তার, অযোগ্য অধ্যক্ষকে প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে আইএইচটির অধ্যক্ষ আমায়াত উল হাছিন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়েছে। তিনি ছুটিতে আছেন। উপাধ্যক্ষ মীর ওমর ফারুক দায়িত্বে আছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। তাঁদের পরীক্ষায় ফেরানোর চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, আইএইচটির শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে এবং মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে। তবে বিকেলের দিকে সড়কের একপাশ দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইএইচটির ছাত্র না হয়েও এক যুগ ধরে অবৈধভাবে ছাত্রাবাসের ২১৮ নম্বর কক্ষ দখল করে রেখেছেন সজল। সেখানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মারধর, হলে সিট-বাণিজ্য, মাদক সেবন এবং পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা জোর করে আদায় করেন সজল। এরে আগে গত ২৯ আগস্ট বিকেল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ওই দিনই আত্মগোপন করেন সজল ঘোষ।

আরও পড়ুন