আত্মীয়দের জন্য হরিণের মাংস ‘প্যাকেট’ করছিলেন, বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার ১

হরিণের মাংসসহ গ্রেপ্তার সেলিম হাওলাদার। আজ শুক্রবার সকালে খুলনার কয়রা উপজেলার নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

রাত সাড়ে ১২টা। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কেবল দূর থেকে ভেসে আসছে নদীর কলকল ধ্বনি। এর মধ্যেই বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় দুটি প্লাস্টিকের ঝুড়ি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সেলিম হাওলাদার। বন থেকে আনা হরিণের মাংস পলিথিনে মুড়িয়ে রাখছিলেন। আত্মীয়দের কাছে হরিণের মাংস ভোরের আগেই পৌঁছে দিতে হবে—এমনটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু হঠাৎই বদলে গেল সবকিছু।

সেলিমের দরজায় তখন কড়া নাড়ে নৌবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল। হতভম্ব সেলিমের হাতে তখনো মাংসবোঝাই প্লাস্টিকের ঝুড়ি। পালানোরও সময় মিলল না। নিজ বাড়ির সামনেই ৪৪ কেজি হরিণের মাংসসহ ধরা পড়েন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খুলনার কয়রা উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ শুক্রবার সকালে কয়রায় নিয়োজিত নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সুন্দরবন-সংলগ্ন ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে হরিণের মাংসসহ সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে কয়রা থানার পুলিশও অংশ নেয়। পরে জব্দ করা মাংস ও আটক ব্যক্তিকে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কয়রা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকালয়ের পাশের একটি সরু নদী পেরোলেই শুরু হয় গভীর জঙ্গল। এ সুযোগে পেশাদার হরিণশিকারিরা রাতের আঁধারে সুন্দরবনে ঢুকে হরিণের চলাচলের পথে দড়ির ফাঁদ পেতে রাখেন। পরে প্রাণীগুলো সেই ফাঁদে আটকে যায়। এরপর বনের ভেতরেই জবাই করে মাংস ভাগ করে নেওয়া হয়। আগেই যেসব বাড়ি থেকে আগাম টাকা নেওয়া থাকে, সেসব বাড়িতে গোপনে পৌঁছে যায় মাংস।

আরও পড়ুন

একই কথা জানান কয়রা থানার উপপরিদর্শক তারেক মাহমুদ। তিনি বলেন, এলাকাটিতে বন্য প্রাণী শিকারসহ নানা বন-অপরাধ বেশি হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে সেখানে গিয়ে সেলিমকে হাতেনাতে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম হাওলাদার জানান, তাঁর কয়েকজন আত্মীয় হরিণের মাংস খেতে চেয়েছিলেন। তাই শিকারিদের কাছ থেকে সেই মাংস কেনেন।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে শিগগিরই আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উদ্ধার করা হরিণের মাংস বিনষ্ট করা হবে। এ ধরনের অপরাধ দমনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন