সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, বাদ পড়লেন এনামুল বলয়ের অনেকেই

আওয়ামী লীগ

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান হয়নি আগের কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা ১৪ নেতার। তাঁরা সবাই গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবিরের বলয়ে ছিলেন। তবে এনামুল কবিরসহ তাঁর বলয়ের সাত নেতা নতুন কমিটিতে আছেন। তাঁদের কারও কারও পদাবনতি হয়েছে। সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক বা সম্পাদকমণ্ডলীর পদ থেকে তাঁদের সদস্য করা হয়েছে।

বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে অন্তত ছয়জন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তির জন্য নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দলের সভাপতির নির্দেশনায় তাঁরা রাজনীতি করেন। সাংগঠনিক কাজ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মিলেমিশেই করতে হয়। সবাই দলের দুর্দিনে মাঠে ছিলেন। শুধু এনামুল কবিরের সঙ্গে থাকায় গ্রুপিংয়ের কারণে তাঁদের কমিটিতে রাখা হয়নি। নতুন কমিটিতে পরিবার, আত্মীয়তা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।

যদিও নতুন কমিটির নেতারা বলছেন, কমিটিতে ত্যাগী এবং অতীতে যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতারা প্রাধান্য পেয়েছেন।

গত কমিটির মতো নতুন কমিটিতেও একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি স্থান পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আত্মীয় বাদে নিজ পরিবার থেকেই তিনজন করে কমিটিতে আছেন। আবার দুই দম্পতি আছেন কমিটিতে। আছেন দুই ভাইও।

গত কমিটির মতো নতুন কমিটিতেও একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি স্থান পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আত্মীয় বাদে নিজ পরিবার থেকেই তিনজন করে কমিটিতে আছেন। আবার দুই দম্পতি আছেন কমিটিতে। আছেন দুই ভাইও। নতুন কমিটিতে ১১ জনকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে আছেন ১১ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনজন। সদস্য ৩৬ জন।

জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রায় সাত মাস পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শুধু সভাপতি নূরুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক নোমান বখতের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।

কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ করা নেতাদের অনেকেই স্থান পাননি। এটা পারিবারিক ও পকেট কমিটি। নেতা-কর্মীরা হতাশ।
নূরে আলম সিদ্দিকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগ

পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন কমিটিতে গত কমিটির ৩৩ জন স্থান পেয়েছেন। বাকি ৪২ জনের মধ্যে ১৫ জন একেবারেই নতুন। যাঁরা আগে কখনোই জেলা কমিটিতে ছিলেন না। ১১ জন সহসভাপতির মধ্যে আগের কমিটিতে একই পদে ছিলেন সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান ও রেজাউল করিম। এ ছাড়া নতুন যুক্ত হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পীর মতিউর রহমান, আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির, আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল করিম, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক করুণা সিন্ধু চৌধুরী, আইনজীবী দিলীপ কুমার দাস, মো. চান মিয়া ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজহারুল ইসলাম।

তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে আগের কমিটিতেও একই পদে ছিলেন হায়দার চৌধুরী। এ ছাড়া নতুন যুক্ত হয়েছেন আগের কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম আহম্মেদ চৌধুরী ও আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম। সম্পাদকীয় পদে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সবুজ কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক বিমান কান্তি রায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মাহবুবুল হাছান, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক স্বপন রায়, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক আমিনুর রশিদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সৈয়দ মাসুম আহমদ, শ্রম সম্পাদক ফজলুল হক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আপ্তাব মিয়া।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দলের পুরোনো, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। গত কমিটির অনেকেই বাদ পড়েছেন। এটা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তাঁদের মূল্যায়ন করা উচিত ছিল।
এনামুল কবির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগ

সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে নতুন যুক্ত হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জীতেন্দ্র তালুকদার, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান। এবার উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হয়েছেন শুভ বণিক, কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান তালুকদার। কমিটির ৩৬ জন সদস্যের মধ্যে জেলার অন্য চারজন সংসদ সদস্যকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নান্টু রায়, সহসভাপতি সৈয়দ আবুল কাশেম ও খায়রুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক জুনেদ আহমদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরীকে এবার সদস্য করা হয়েছে।

এ ছাড়া সদস্য হিসেবে নতুন যুক্ত হয়েছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিৎ সরকার, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক আহমেদ, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমেদ, আজমল হোসেন, শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন চৌধুরী, সৈকতুল ইসলাম, অনুপম রায়, আজাদ হোসেন, সজিব রঞ্জন দাস, আবদুল ওদুদ, শাহীন রেজা, অজয় কান্তি তালুকদার, নায়েব আলী, সাহারুল আলম, মাসুক আহমদ সরকার, কামরুল হুদা, লিটন সরকার, সাজ্জাদ হোসেন, গোলাম কিবরিয়া, প্রদ্যুত কুমার তালুকদার ও শাহরিয়ার বিপ্লব।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সবাই খুশি। কমিটিতে ত্যাগী ও পদবঞ্চিত ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। তৃণমূলে দলের জন্য যাঁরা নিবেদিত, তাঁদের তুলে আনা হয়েছে। নবীন-প্রবীণ মিলিয়েই কমিটি হয়েছে।
নূরুল হুদা, সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগ

দলীয় সূত্র জানায়, এনামুল কবিরের বলয়ে থাকা বাদ পড়া নেতাদের মধ্যে আছেন আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ ইসতিয়াক শামীম, দপ্তর সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহ আবু নাসের, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল আজাদ, উপদপ্তর সম্পাদক হুমায়ূন কবির, সদস্য সুবির তালুকদার, রেজাউল আলম, ফজলুল কবির, রফিকুল্লাহ, মলয় চক্রবর্তী, হাসান মাহবুব, শামীম আখঞ্জি ও সৈয়দ তারিক হাসান।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ করা নেতাদের অনেকেই স্থান পাননি। এটা পারিবারিক ও পকেট কমিটি। নেতা-কর্মীরা হতাশ।’ সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল আজাদ বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করছি। আশা ছিল আমাদের শ্রম ও কর্মের মূল্যায়ন করা হবে, কিন্তু করা হয়নি। আমাদের পদ থেকে সরানো যাবে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, আওয়ামী লীগ থেকে সরানো যাবে না।’

আরও পড়ুন

নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জীতেন্দ্র তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সবাই খুশি। এবারের কমিটিতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বঞ্চিত ব্যক্তিদের তুলে এনেছেন। এতে তৃণমূলে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে।

জানতে চাইলে এনামুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দলের পুরোনো, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। গত কমিটির অনেকেই বাদ পড়েছেন। এটা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তাঁদের মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। তাঁদের মূল্যায়নের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সবাই খুশি। কমিটিতে ত্যাগী ও পদবঞ্চিত ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। তৃণমূলে দলের জন্য যাঁরা নিবেদিত, তাঁদের তুলে আনা হয়েছে। নবীন-প্রবীণ মিলিয়েই কমিটি হয়েছে। এতে নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত।