মানববন্ধনে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘গত শনিবার একপর্যায়ে উপাচার্যসহ প্রশাসনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ করে চলে এলেন। সেখানে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউ থাকলেন না। কিন্তু সেখানে তখনো শত শত শিক্ষার্থী অন্ধকারে ছিলেন। সেখানে স্লোগান হচ্ছিল। কিন্তু সেখানে কেন প্রশাসনের কেউ থাকলেন না? উপাচার্য সেখান থেকে কেন শিক্ষার্থীদের ফেরাতে পারলেন না? উপাচার্য চলে আসার পর সেখানে পুলিশ কেন গুলি চালাবে? শিক্ষার্থীরা তো তখন ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছিলেন। তাঁদের (পুলিশ) এই অধিকার কে দিলেন? পুলিশ সেখানে কার নির্দেশে গুলি চালিয়েছে, এটা খুঁজে বের করা দরকার।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিন্দা করে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমি শুনেছি, উপাচার্য ও ছাত্র উপদেষ্টা সরাসরি ছাত্রলীগকে বিনোদপুরের ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অথর্ব হয়ে গেছে? কেন ছাত্রলীগের সহযোগিতা নিয়ে একটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে হয়? আপনার না পারলে ছাত্রলীগকে প্রশাসনে বসান, আপনারা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসুন।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান বলেন, ‘আজকের মানববন্ধন উন্মুক্ত ছিল। এখানে যে উপস্থিতি, তা বলে দেয়, যা ঘটছে তা যথেষ্ট পরিমাণে বিচলিত করছে না। যখন ঘটনা ঘটে, তখন তীব্র উত্তেজনা শুরু হয়, উগ্র কর্মকাণ্ড চালাই। তারপর ঠান্ডা হয়ে যাই। আবার অপেক্ষায় থাকি কোনো ঘটনার জন্য। এর বাইরে কিছু ঘটছে না। এই সবকিছু শিক্ষার অবনমনের একটি দিক। সুশিক্ষা থাকলে এই মানসিকতা তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। দুই পক্ষে সংঘর্ষে ছাত্ররা যদি বলে জিতবেন, স্থানীয়রা যদি ভাবেন জিতবেন, তাহলে প্রয়োজন সুসম্পর্ক।’

সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দায়িত্বশীল মানুষ ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে সালেহ্ হাসান বলেন, সবার আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকা দরকার ছিল। এ ব্যর্থতার জন্য দায় নিতে বাধ্য করা দরকার। এই রকম আন্দোলনও করা দরকার। বারবার ব্যর্থ হবেন আর ছাড় পাবেন, এটা হতে পারে না। কে গুলি করল, কেন গুলি করা হলো, কে অনুমতি দিলেন—এগুলো খুবই সুস্পষ্ট প্রশ্ন। ঘটনা এত দূর কেন গেল, এগুলো বের করতে হবে।’

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্যসচিব আমানুল্লাহ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই ক্যাম্পাসে একজন পুলিশও প্রবেশ করে, একটা গুলিও যদি ছোড়ে, সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এই অনুমতি তারা দেয়নি। পুলিশ প্রশাসনও পরিষ্কার করল না, তারা কার নির্দেশে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাল। গুলি খাওয়া অনেকের চোখ অন্ধের দিকে। তারা আর দুনিয়ার আলো দেখতে পাবে কি না। বিনোদপুরে সেদিন ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ক্ষমতাচর্চার একটি বিষয় ছিল। সেই জায়গায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এখন বিষয়গুলো পরিষ্কার হচ্ছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা পুরোপুরি ব্যর্থ।

নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতে নিপীড়নের শিকার হন। তাঁদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে উপাচার্যের কেমন অনুভূতি, এটা জানার খুব ইচ্ছা বলে জানান তিনি।