সাড়ে তিন বছরের শিশু মো. হোসাইন মিয়া। হোসাইন তার মা হোসনা আক্তার ও বাবা মো. জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে গত সোমবার ঢাকায় যাচ্ছিল। ভৈরবে রেল দুর্ঘটনায় হোসনা মারা যান। বাবার চেষ্টার কারণে হোসাইন বেঁচে ফিরেছে। বাড়িতে ফেরার পর থেকে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে হোসাইন। তাকে নানা-নানি বলেছেন, তার মা ঘুমিয়ে আছে। দিনের বেলা খেলাধুলায় সময় কেটে গেলেও রাতে ঘুমানোর সময় হোসাইন মায়ের কোল খুঁজে ফেরে। কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে সে।
হোসাইন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের নবীয়াবাদ গ্রামের আরজু মিয়ার নাতি। বাবা জুনায়েদ কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার সাখুয়া গ্রামের বাসিন্দা। আরজু মিয়া তাঁর শ্বশুর। জুনায়েদ ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
জুনায়েদ হোসেন বলেন, সোমবার তিনি তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রী হোসনা আক্তার, ছেলে হোসাইন ও শ্যালক তরিকুল ইসলামকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে এগার সিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েছিলেন। একসঙ্গে জায়গা না পাওয়ায় ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী হোসনা আক্তার বসেছিলেন বগির এক পাশে। তিনি তরিকুলকে নিয়ে অপর পাশে বসেছিলেন।
ভৈরব জংশনে পৌঁছানোর পর ট্রেনের ইঞ্জিন ঘোরানো হয়। তখন তিনি (জুনায়েদ) হোসাইনকে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। ট্রেনটি ভৈরব থেকে ছাড়ার কিছুক্ষণ পর তাঁদের বগিতে প্রচণ্ড শব্দ করে অপর একটি ট্রেন ধাক্কা মারে। এতে যে সারির আসনে হোসনা বসেছিলেন, সে দিকটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
জুনায়েদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘চোখের সামনে স্ত্রীর দেহ ছিন্নভিন্ন হতে দেখেছি। কিছুই করতে পারিনি। এ সময় ধাক্কা সামলাতে এক হাত দিয়ে সন্তান ও অপর হাত দিয়ে শ্যালককে চেপে রাখি।’
হোসনার বাবা আরজু মিয়া বলেন, হোসনা ২৩ দিন তাঁর বাড়িতে বেড়ানোর পর স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজে মেয়েকে বিদায় দিয়েছিলেন। এটি যে মেয়ের সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা হবে, তা বুঝতে পারেননি। নাতি হোসাইন তাঁদের কাছে বারবার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করেন। তাঁরা নাতিকে বলেছেন, মা ঘুমাচ্ছে। সারা দিন প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটায় হোসাইন। কিন্তু রাতে সে মাকে খুঁজে ফেরে। মায়ের সঙ্গে ঘুমানোর বায়না ধরে। মাকে কাছে না পেয়ে সে একসময় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। একটি দুর্ঘটনা তাঁর মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে, তাঁর নাতিও চিরদিনের মতো মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হলো।
পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, হোসনার পরনে সোনার গয়না ছিল। কিন্তু ট্রেন দুর্ঘটনার পর তাঁর লাশ বুঝে পাওয়ার পর কোনো গয়না পাওয়া যায়নি। হাতে একটি দামি ঘড়ি ছিল। সেটিও পাওয়া যায়নি। তাঁরা ঘটনার তদন্ত চান।