ভৈরবে যেভাবে ঘটল ট্রেন দুর্ঘটনা
কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের আউটার পয়েন্টে আজ সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে সংঘটিত দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্রসিং–ত্রুটিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৭ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আন্তনগর এগারোসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে বেলা ৩টার দিকে ভৈরব স্টেশনের ৩ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এরপর সেখানে ট্রেনটির ইঞ্জিন ঘোরানো হয়। সোয়া তিনটার দিকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ভৈরব স্টেশন ছাড়ে। ঢাকার দিকে যেতে ৩ নম্বর লাইনকে ক্রস করে ১ নম্বর লাইন দিয়ে যেতে সিগন্যাল দেওয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে পেছনের দুটি বগি ছাড়া বাকি বগিগুলো ক্রস পয়েন্ট অতিক্রম করে। তখন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটি ২ নম্বর লাইন দিয়ে আসছিল। মালবাহী ট্রেনটিও স্টেশনের ১ নম্বর লাইনে প্রবেশের সিগন্যাল পায় এবং ক্রস পয়েন্ট সেইভাবে প্রস্তুত ছিল। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের শেষে দুই বগি ক্রস করার সময় মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনটি ক্রস পয়েন্ট ঢোকে। তখনই এগারোসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিকে ধাক্কা দেয়। এতে পেছনের দুটি বগি লাইন থেকে ছিটকে উল্টে যায়। বেশ কয়েকজন যাত্রী বগি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে যান। বগির ভেতরে যাত্রীরা একজন অপরজনের অপর চাপা পড়েন। দুর্ঘটনার পর উভয় ট্রেনের চালক পালিয়ে যান। গা ঢাকা দেন স্টেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মরতরাও। মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের অংশ খুলে পড়ে যায়।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কর্মরতদের ক্রসিং পয়েন্ট প্রস্তুতে ভুল ছিল। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন লাগোয়া এলাকা পৌর শহরের জগন্নাথপুর। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর প্রথমে এলাকার লোকজন উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। প্রথম দিকে উদ্ধারকাজে অংশ নেন স্টেশনের হকাররাও। মূলত তাঁরা বগির ভেতর থেকে আহত ব্যক্তিদের বের করে এনে হাসপাতালে পাঠান। ওই সময় হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব, ডিবি পুলিশ ও যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা এসে বগির ভেতর থাকা মরদেহ বের করে আনেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জগন্নাথপুর এলাকার কলেজশিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘বিকট শব্দ আর মানুষের চিৎকার কানে আসার পর ধারণা করছিলাম হয়তো ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসে দেখি ভয়াবহ অবস্থা। ভেতর থেকে অসংখ্য মানুষের চিৎকারের শব্দ আসছে। বাইরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে অনেকে। সবার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।’
স্টেশনের হকার আমিনুল ইসলাম দুর্ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যে এসে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। আমিনুল বলেন, ‘মানুষ কত অসহায় হয়ে পড়তে পারে এই দুর্ঘটনা না দেখলে ধারণা করতে পারতাম না। মানুষের ওপর মানুষ। অনেকের হাত কেটে গেছে। কারও কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রক্ত আর রক্ত।’
যুব রেড ক্রিসেন্ট ভৈরব শাখার ২০ জন কর্মী উদ্ধারে সহায়তা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। যুব রেড ক্রিসেন্টর সদস্য কাজী মুকাদ্দেশ জানান, তাঁদের টিমের সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। তবে মানুষের ভিড়ের কারণে উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটে।
উদ্ধারকাজ তদারকির জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ, র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মো. আলী আক্কাস ঘটনাস্থলে আসেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, উদ্ধারে একাধিক টিমের সদস্যরা কাজ করছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।