চাপ অনুভব করাতে নির্বাচন থেকে সরে গেছি: আবু আসিফ

বিকেলে বাসায় ফেরেন আবু আসিফ আহমেদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশুগঞ্জের শরীয়তনগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ বলেছেন, ‘প্রথম থেকে আমার কাছে নির্বাচন অগোছালো মনে হয়েছিল। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি বেশি চাপ নিতে পারছিলাম না। বেশি চাপ অনুভব করাতে আমি থেকে নির্বাচন থেকে সরে গেছি। চাপ নিয়ে আমি থাকতে পারব না। এ জন্য আমি নির্বাচন ছাইড়া সইরা গেছি।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে আশুগঞ্জের শরীয়তনগর এলাকায় নিজ বাসায় ফেরেন আবু আসিফ। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে সাংবাদিকেরা তাঁর বাসায় যান। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন

আবু আসিফ বলেন, ‘চাপ নিতে পারছিলাম না। আমি মানসিকভাবে ভেঙে গিয়েছিলাম। নির্বাচন শেষ হয়েছে, আমি চলে এসেছি।’ কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম আমার একটি জায়গায়।’ সরে দাঁড়ানোর জন্য কেউ কোনো চাপ বা ভয়ভীতি দেখিয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহরীন তাঁকে থামিয়ে দেন।

সন্ধ্যায় আবু আসিফ নিজ কক্ষে বিছানায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে ছিলেন। কিছুটা অসুস্থ দেখাচ্ছিল তাঁকে। সে সময় স্ত্রী মেহেরুননিছা, শ্যালক সায়ায়েত সুমন, দারোয়ান ইছু মিয়াসহ অনেকেই তাঁর কক্ষে ছিলেন।

আরও পড়ুন

আসিফের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আশুগঞ্জের বাসায় ছিলাম। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে জানতে পারি, স্বামী ঢাকার বসুন্ধরার বাসায় ফিরেছেন। আমাকে ফোন দেওয়ার পর ঢাকায় চলে যাই। স্বামীকে নিয়ে বিকেল পাঁচটায় আশুগঞ্জে চলে আসি। তিনি অসুস্থ বোধ করছেন।’

মেহেরুননিছা বলেন, নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন আগে থেকে তিনি চাপ অনুভব করা শুরু করেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই চাপ থেকে নির্বাচন সরে দাঁড়ান। এক কাপড়ে গিয়েছেন, এক কাপড়েই ফিরেছেন। এতটাই হতাশায় ভুগছিলেন তিনি, নিজের মুঠোফোনটিও বাসায় রেখে চলে যান।

আরও পড়ুন
আসিফের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশুগঞ্জের শরিয়তনগরে নিজ বাসায়
ছবি: প্রথম আলো

নিরাপত্তাহীনতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। নিজে নিজে ভয় পাচ্ছিলেন। অন্য কোনো কারণ নেই। কোনো সংস্থা বা কেউ ভয় দেখিয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানসিক চাপ থেকে ভয় পাচ্ছিলেন। নিখোঁজের দুই দিন আগেও তিনি কাজে বের হননি। মানসিক চাপে থাকলে মানুষ যেমন অসুস্থ থাকে, তেমনই এখন তাঁর অবস্থা।

এর আগে দুপুরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন মেহেরুননিছার বরাত দিয়ে আসিফের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রথম আলোকে জানান। তিনি বলেছিলেন, আসিফের স্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় তাঁদের বাসায় আছেন। সন্ধ্যার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছাবেন।

আরও পড়ুন

আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে জয়ী বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি।

এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে আবু আসিফের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। মুঠোফোন বাসায় চার্জারে রেখে বের হন তিনি। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। নিখোঁজের ৯২ ঘণ্টা পর তাঁর সন্ধানে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন তাঁর স্ত্রী মেহেরুননিছা।

আরও পড়ুন

উপনির্বাচনে ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফলে ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলার ছড়ি)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৩৫ ভোট। অন্যদিকে আবু আসিফ আহমেদ পেয়েছেন ৩ হাজার ২৬৯ ভোট। এ আসনে ভোট পড়েছে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ।