যাঁদের বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট, তাঁদের বিরুদ্ধেই নাশকতার মামলা

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীর রাজনৈতিক কার্যালয় ও বাড়িতে হামলা–ভাঙচুরের পর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে জিনিসপত্র। গত বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘শান্তি’ মিছিল করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর চালান। ঘটনার পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উল্টো নাশকতার মামলা করেছে পুলিশ।

আজ শনিবার কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলীমুর রাজি বাদী হয়ে ১৩৬ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৭০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। মামলায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে প্রধান আসামি করা হয়। ঘটনার দিন তাঁর বাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

আরও পড়ুন

এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে নেত্রকোনার বিভিন্ন থানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত সাতটি মামলা হলো। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৯৯৫। একটি ছাড়া সব মামলার বাদী পুলিশ।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে ঘটনাস্থল হিসেবে কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের কুন্ডলী জামতলা এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়। ঘটনার সময় বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিট। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকার পতনের উদ্দেশ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করাসহ পুলিশের কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ ও মশালমিছিল করা হয়। মামলার জব্দ তালিকায় বিস্ফোরিত ককটেলের কয়েকটি টুকরা, বাঁশের তৈরি মশাললাঠি ও জর্দার কৌটার কথা উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার বাদী উপপরিদর্শক আলীমুর রাজির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক দাবি করেন, কোনো মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত ককটেল, জর্দার কৌটার অংশ, বাঁশের তৈরি মশাললাঠিসহ বিভিন্ন বিষয় জব্দ করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে কেন্দুয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাফিজ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।  

যদিও বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে এজাহারে উল্লিখিত ঘটনার আগের দিন ঝটিকা মশালমিছিল করেন। বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে কেন্দুয়া পৌর শহরসহ কয়েকটি এলাকায় তাঁরা মশালমিছিল করেন। মিছিলের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘শান্তি’ মিছিল বের করে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালীর বাসার ফটক ভেঙে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয় ও বাসায় ভাঙচুর চালান। এরপর থানা ফটক-সংলগ্ন পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলমের দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এরপর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির খন্দকার, যুবদলের নেতা আল আমিন ও জেলা বিএনপির সদস্য দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।

রফিকুল ইসলাম হিলালী
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে হামলা হয়, পুলিশের করা মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, থানা-সংলগ্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করেছে। তবে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কান্দিউড়ার জামতলা এলাকার এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার রাতে এলাকায় মিছিল করেছিল বিএনপির লোকজন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের মিছিল করতে দেখেননি।

মামলার প্রধান আসামি রফিকুল ইসলাম হিলালী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর বাসাসহ বিএনপি, সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। সব কটির ঘটনাস্থল থানা-সংলগ্ন এলাকায়। তখন পুলিশও উপস্থিত ছিল। কিন্তু পুলিশ হামলা-ভাঙচুরের ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁকেসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে ‘গায়েবি’ মামলা দিয়েছে। যদিও এসব মামলা তাঁদের কাছে নতুন নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আমলে শুধু তাঁর বিরুদ্ধে এমন ৫৫টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা কোনো মিছিল করেননি।

তবে ওসি এনামুল হক দাবি করেন, ‘পুলিশের কাছে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে।’ ভিডিওটি বুধবার রাতের কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়।