পিরোজপুরে সংসদ সদস্যের কর্মীকে কুপিয়ে জখম, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মহড়া

সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের বিক্ষোভ। আজ শনিবার দুপুরে পিরোজপুর শহরের শহীদ ওমর ফারুক সড়কেছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুর পৌরসভার উত্তর নামাজপুর মহল্লায় ফয়সাল আকন (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পর আজ শনিবার দুপুরে পিরোজপুর শহরে পাল্টাপাল্টি মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। এতে শহরের সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ফয়সাল আকন উত্তর নামাজপুর মহল্লার মোজাম্মেল আকনের ছেলে। তিনি পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, ইন্দুরকানি) আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের জেলা শাখার সভাপতি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারীরা ফয়সালের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ সংসদ সদস্যের অনুসারীদের।

ফয়সাল আকন
ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উত্তর নামাজপুর মহল্লার একটি দোকানে বসে ছিলেন ফয়সাল আকন। এ সময় স্থানীয় মিজানুর রহমান ও সাঈদুর ফকিরের নেতৃত্বে দুটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন সেখানে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফয়সালকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরপর মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় পাঠান। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ভর্তি করা হয়। আজ সকালে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দুই দফা তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা।

পিরোজপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফ হাসান বলেন, ফয়সাল আকনের মাথার ডান দিকে, পিঠ, হাতসহ শরীরে একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপের গুরুতর জখম রয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই খুলনায় পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন

ফয়সাল আকনকে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে এবং এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করেন সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের অনুসারীরা। আজ দুপুরে পিরোজপুর শহরে আবারও বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। এতে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামিম সিকদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমেন মোর্শেদ প্রমুখ।

আজ দুপুরে প্রায় একই সময় শহরে পৃথক মিছিল বের করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর ভাই পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমানের অনুসারীরা। এতে নেতৃত্ব দেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার কাউন্সিলর সাদউল্লাহ। এ সময় মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা শহরের রাজারহাট এলাকায় একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও প্রতিপক্ষের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। দুই পক্ষের বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় শহরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে দোকান বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন

সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম বলেন, ফয়সাল আকন সংসদ নির্বাচনে নৌকার এজেন্ট ছিলেন। এ জন্য তাঁকে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান।

অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদউল্লাহ বলেন, ফয়সাল আকন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে কিছু লোক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়রকে নিয়ে কটূক্তি করছিলেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা শহরে মিছিল করেন। মূলত এলাকায় (উত্তর নামাজপুর মহল্লা) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফয়সালকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফয়সাল আকনের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া মিজানুর রহমান ও সাঈদুর ফকির জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারী। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল শহরের বাইপাস সড়কে যুবলীগ কর্মী রাসেল শেখকে (৩৫) হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি মিজানুর ও সাঈদুর। দুজনই ঘটনার পর আত্নগোপনে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে। শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

উল্লেখ্য, পিরোজপুরে আওয়ামী লগের দুটি পক্ষ রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ ম রেজাউল করিমের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল। দীর্ঘদিন ধরে দুই নেতার অনুসারীরা বিভক্ত থাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই হামলা–সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন