নিবন্ধনহীন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে বিপাকে ৪৫ শিক্ষার্থী

নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে মাইগ্রেশনের দাবিতে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাভারের আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সাভারের আশুলিয়ার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তাঁরা। সংখ্যায় ৪৫। তাঁদের দাবি মাইগ্রেশনের। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছয়জন হাসপাতাল ভবনটির সামনে অবস্থান করছেন। বাকিরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র এটি। শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন না থাকায় প্রায় দেড় বছর ধরে মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলন করছেন এসব শিক্ষার্থী। দাবি আদায় না হওয়ায় শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আশুলিয়ার নারসিংহপুর এলাকায় নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ নোটিশ টাঙিয়েছেন। ফটক পেরোলেই হাসপাতাল, ক্যানটিন ও প্রশাসনিক ভবনের প্রতিটি জানালা ও দরজার কাচ ভাঙা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কেউ নেই। বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে লেখা ‘হাসপাতাল না সবজিখেত’, ‘প্রতারণা আর না আর না’, ‘নাইটিঙ্গেল প্রতারণা বন্ধ হোক’, ‘উই ওয়ান্ট মাইগ্রেশন’সহ নানা স্লোগান।

আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৮ সালে ২০১৭-২০১৮ সেশনে ভর্তি হন তাঁরা। ভর্তির তিন মাস পর তাঁরা জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য অনুমোদন নেই। পরে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বললে সে সময় তাঁদের জানানো হয়, দ্রুতই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে পরে এটি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মাইগ্রেশনের দাবিতে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি শুরু করেন।

সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেন। এ ছাড়া ওই সব প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একই বছরের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতে মাইগ্রেশনের জন্য রিট আবেদন করেন তাঁরা। ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দেন আদালত।

এর আগে একই দাবিতে ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন চলাকালে হাসপাতাল, ক্যানটিন ও প্রশাসনিক ভবনের জানালা ও দরজার কাচ ভাঙচুর করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, বহিরাগতদের দিয়ে ভাঙচুর চালায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৬ সালে মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালা না মানায় কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। পরে আদালতের মাধ্যমে স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে প্রতিষ্ঠানটি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইমরান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার পরপরই জানতে পারি, প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রেশন নেই। প্রশাসন প্রথম বর্ষে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন এনে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন এনে দিতে পারেনি। মাইগ্রেশনের দাবি পূরণ না হওয়ায় আমাদের ৪৫ জন শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দাবি আদায়ে বিভিন্ন সময় আমরা সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছি।’

শিক্ষার্থী জামিলুর রহমান ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২১ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে স্থায়ী কোনো শিক্ষক ছিল না। অনেক সময় সকালে যে শিক্ষক ক্লাস নিয়েছেন, অব্যবস্থাপনার কারণে বিকেলে তাঁকে পদত্যাগ করে চলে যেতে দেখছি। হাসপাতালে শুধু জরুরি বিভাগে একজন মেডিকেল কর্মকর্তা ছিলেন।’

শিক্ষা কার্যক্রম বেহাল হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ১৫ লাখ করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। ২০২১ সালের আন্দোলনের আগপর্যন্ত প্রতি মাসে টিউশন ফি হিসেবে ৮ হাজার ও হোস্টেল ফি হিসেবে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রোকেয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে দেড় বছর ধরে মাইগ্রেশনের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমাদের অনুরোধ, দ্রুত এ সংকট নিরসন করে আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে দিন।’

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন জামান চৌধুরীর মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস রুমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলন করছে। চার-পাঁচ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি না। আমি শুনেছি মাইগ্রেশনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আপত্তি রয়েছে। আশা করছি বিষয়টি দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।’