নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, পানিবন্দী পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার

নীলফামারীতে শুক্রবার সকালে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে
ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ শুক্রবার সকালে পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রাতভর নদীতে পানি বাড়ায় ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত সাতটি ইউনিয়নের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ছয়টায় লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সন্ধ্যা ৬টায় পানি আরও বেড়ে ৩৫ সেন্টিমিটার এবং রাত নয়টায় ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ সকাল ৬টায় সেখানে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রেখেছে পাউবো।

তিস্তা নদীতে অব্যাহতভাবে পানি বাড়ার কারণে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীবেষ্টিত ১৫টি চরের ৫ হাজারের বেশি পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

পূর্ব ছাতনাই মৌজার বাসিন্দা দবির উদ্দিন (৬৫) আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে নদীর পানি বাড়ছে তো বাড়ছে। কমার নাম নাই। রাতে ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। সারাটা রাত পরিবার নিয়া জাগি ছিলাম। কখন যে নদী ঘরবাড়ি ভাঙি নিয়া যায়, সেই ভয়ে ছিলাম। আমার বাড়িতে এখনো হাঁটুপানি। আমরা খুব কষ্টে আছি।’ তাঁর মতো আরও অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন বলে তিনি জানান।

ডিমলার খালিশাচাপানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নের ছোটখাতা ও বাইশপুকুর গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। নদীতে অব্যাহতভাবে পানি বাড়ায় মানুষ আতঙ্কে ছিল।

পূর্ব ছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সারা রাত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এ কারণে তাঁর ইউনিয়নের পূর্ব ছাতনাই, ঝাড়সিংহেশ্বর, বারবিশা ও ফ্লাটপাড়া গ্রামের ১ হাজার ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে বন্যার পানি উঠেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন। যাঁরা যেতে পারেননি, তাঁরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।

পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে রেখে তাঁরা সতর্ক অবস্থায় আছেন।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যানদের পানিবন্দী মানুষের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তালিকার পর জানা যাবে, কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দী। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। প্রয়োজনে আমরা ত্রাণসহায়তা পৌঁছে দেব।’