নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িঘরছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িঘরছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গত ১৫ দিনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলামসহ বিএনপির সোয়া তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে। প্রতি রাতেই জেলার নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানের সময় স্বজনদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে ডাকা বিএনপির মহাসমাবেশের আগে থেকেই বাসার বাইরে থাকেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। প্রতি রাতে তাঁর খোঁজে পুলিশ ও ডিবি বাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছে। পুলিশের ভয়ে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকছেন।

আরও পড়ুন

আজ শনিবার দুপুরে শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসায় গেলে কথা হয় সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী শামীমা ইসলামের সঙ্গে। তিনি নিজেও পেশায় আইনজীবী। কাপড় নেওয়ার জন্য বাড়িতে এসেছেন তিনি। আবার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাবেন বলে জানান তিনি। প্রথম আলোকে শামীমা ইসলাম বলেন, ‘বাসার গেটে পুলিশ এসে এলোপাতাড়ি লাথি দেয়। আমরা সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি। ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে পারছি না। স্বামী আইন পেশায় আদালতে যেতে পারছেন না।’ পুলিশি উৎপাত ও হয়রানি আগে থেকে অনেক বেড়ে গেছে বলে তিনি জানান। স্বামীর মামলাগুলো তদারকি করছেন তিনি।

সাখাওয়াত হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে নতুন আরও ১০টি মামলা করা হয়েছে। আগেও রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ২০টি মামলা দেওয়া হয়েছিল।

জেলার সাতটি থানা এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার ১৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শহরের নগর খানপুর রায় বাড়ি এলাকায় বসবাস করেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম। ওই বাড়িতে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে আছেন। স্ত্রী সুরাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ অক্টোবরের সপ্তাহখানেক আগে থেকে তাঁর স্বামী গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িতে থাকেন না। প্রতি রাতে তাঁর স্বামীকে খোঁজ করতে পুলিশ আসে। সুরাইয়া বলেন, ‘আমরা তিনজন মেয়ে মানুষ একা বাড়িতে সারাক্ষণ ভয়ে থাকি। ছোট মেয়ে বাবার জন্য কান্নাকাটি করে। বড় মেয়েটার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা। একা একজন মেয়ে মানুষ হয়ে বাজার করা, বাচ্চা সামলানো অনেক কষ্টকর।’ তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে নতুন ৩টিসহ ৩৮টি মামলা রয়েছে।

আরও পড়ুন

মনিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যুবদলের ২৫-২৬ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সবার বাড়িতে যাচ্ছে পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শহরের খানপুর এলাকায় মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব শাহেদ আহমেদের বাড়ি তালাবন্ধ অবস্থায় দেখা যায়। নিচতলার ভাড়াটে চা-দোকানি শেখ ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের ১৫ দিন আগে শাহেদ একবার বাড়িতে এসেছিলেন। এর পর থেকে তিনি বাড়িতে আসেন না। ডিবি পুলিশ তাঁকে খুঁজতে এসেছিল। তারা বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, শাহেদের চাচা মারা গেলে তাঁর বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে গেছেন। সেখানে আছেন তাঁরা।

মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. অপুর সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের বাড়িতে গিয়ে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি থানা এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার ১৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু ইউসুফসহ ৩২৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস দমন আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এসব মামলা করা হয়েছে। তিনটি মামলা ছাড়াও সবগুলো মামলার বাদী পুলিশ।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুকসহ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে প্রতিদিন রাতে ডিবি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

দলের বড় নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীর বাড়িতেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে ও ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁদের ‘গায়েবি’ মামলায় আসামি করা হচ্ছে। অবিলম্বে পুলিশি ধরপাকড় বন্ধ ও গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ১৮টি মামলা করা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যাঁরা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের সঙ্গে জড়িত, ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অযথা গ্রেপ্তার বা হয়রানি করার অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের ইন্ধনদাতা, অর্থ জোগানদাতা যাঁরা, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন