বুড়িগঙ্গায় খেয়ানৌকা চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ

কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ফেরীঘাট, মান্দাইল বাজার ঘাট, আগানগর ঘাট, জিনজিরা টিনপট্টি ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খেয়ানৌকার মাঝিদের নৌকা চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাঝিরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় জিনজিরা ঘাট থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীগামী খেয়ানৌকা চলাচল বন্ধ রাখতে মাঝিদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যায় ছয়টার দিকে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ফেরীঘাট, মান্দাইল বাজার ঘাট, আগানগর ঘাট, জিনজিরা টিনপট্টি ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খেয়ানৌকার মাঝিদের নৌকা চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিনজিরা বাজারঘাট ও আগানগর গুদারাঘাট এলাকার একাধিক নৌকার মাঝি এই প্রতিবেদককে বলেন, সন্ধ্যার দিকে বেশ কয়েকজন লোক এসে তাঁদের হুমকি দিয়ে যান। বলে যান, এখন থেকে আর নৌকা চালানো যাবে না। যে এই নির্দেশ মানবে না, তাকে দেখে নেওয়া হবে। জবাবে মাঝিরা জানিয়েছেন, আরও ঘণ্টাখানেক সময় চালিয়ে নৌকা ঘাটে ভিড়িয়ে রাখবেন। মাঝিরা জানান, যাওয়ার আগে হুমকিদাতা ব্যক্তিরা বলে গেছেন, আগামীকাল সকাল থেকে যেন ঘাটে কোনো নৌকা না থাকে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ম ই মামুন বলেন, যানবাহন ও খেয়ানৌকা চলাচল বন্ধ করার নির্দেশনা কাউকে দেওয়া হয়নি। কে বা কারা মাঝিদের এ ধরনের কথা বলেছে, সে ব্যাপারে কিছু জানেন না। বরং নদীঘাটগুলোতে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সেদিকে নজরদারি রয়েছে। নৌকা চলাচল বন্ধ রাখার অভিযোগটি সঠিক নয়।

এ ছাড়া কেরানীগঞ্জে ঢাকার প্রবেশমুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তল্লাশি জোরদার করতে দেখা গেছে। তারা ঢাকাগামী গণপরিহনের যাত্রীদের তল্লাশি ও সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। আজ সকাল থেকে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত কেরানীগঞ্জের কদমতলী লায়ন শপার্স বিপণিবিতান এলাকায় সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে।

বিকেল পাঁচটার দিকে কদমতলী লায়ন শপার্স বিপণিবিতান এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চল ও ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ থেকে আসা গণপরিবহনগুলো থামিয়ে পুলিশ যাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখছে ও তাঁদের গন্তব্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। এ সময় তাঁরা যাত্রীদের মালামাল তল্লাশি করে দেখেন।

মাদারীপুরের পাঁচচর থেকে আসা হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই অসুস্থ। তাকে দেখতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় যাচ্ছিলাম। কদমতলী এলাকায় পুলিশ বাস থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করেছে। নিরাপত্তা জন্য পুলিশ তল্লাশি করবে, এটা স্বাভাবিক। তবে তল্লাশির নামে যাতে কাউকে হয়রানি না করা হয়।’

কদমতলী এলাকায় নিয়োজিত পুলিশ পরিদর্শক ফজলুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীতে রাজনৈতিক দলের কমসূচিকে ঘিরে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করতে পারে, সে জন্য আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। এর অংশ হিসেবে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাউকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে না। জননিরাপত্তার স্বার্থে এটি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।’

আগামীকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের মহাসমাবেশ বানচাল করতে বুড়িগঙ্গায় নৌকা চলাচলে বাধা দেওয়াসহ আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বলেন, ‘রাজধানীর পল্টনে আমাদের দলীয় মহাসমাবেশ যাতে জনগণ ও আমাদের নেতা–কর্মীরা যাতে না যেতে পারেন, সে জন্য পরিকল্পিতভাবে নৌকার চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। তবে নৌকা ও যানবহন বন্ধ করে দিয়ে আমাদের নেতা–কর্মীদের বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’