চিকিৎসা অবহেলায় বাবার মৃত্যুর অভিযোগে চিকিৎসকদের কক্ষে ছেলের ভাঙচুর

নতুন ভবনের চারতলার মেডিসিন ইউনিট-২–এ চিকিৎসকদের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে। রোববার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় বাবার মৃত্যুর অভিযোগে চিকিৎসকদের কক্ষে ছেলে ভাঙচুর করেছেন। আজ রোববার সকালে হাসপাতালের নতুন ভবনের চারতলায় মেডিসিন ইউনিট-২–এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া ওই রোগীর নাম শহিদুল ইসলাম (৫০)। তাঁর বাড়ি ব‌রিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের কলসগ্রাম এলাকায়।

মারা যাওয়া রোগীর শ্যালক ফারুক হাওলাদার অভিযোগ করেন, তাঁর ভগ্নিপতি শহিদুল ইসলামের গতকাল শনিবার রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে তাঁকে শের-ই-বাংলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগ থেকে তাঁকে মেডিসিন ইউনিট-২–এ ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাঁর ভগ্নিপতির বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাঁকে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অক্সিজেন দিতে দেরি করায় সকাল ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর চিকিৎসক এসে কর্তব্যরত নার্সদের বকাঝকা করেন।

ফারুক হাওলাদার আরও বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতির তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পরপর তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার আনলেও তাতে অক্সিজেন ছিল না। পরে কোনোরকম একটি সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা গেলেও ততক্ষণে তিনি মারা যান।’

শহিদুল ইসলামের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের কক্ষে ঢুকে আসবাব ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেডিসিন বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক আশিক রহমানের দাবি, চিকিৎসায় কোনোরকম অবহেলা ছিল না। রোগীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মো. জুম্মন ক্ষুব্ধ হয়ে চিকিৎসকদের কক্ষে ভাঙচুর করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে আটক করে।

ঘটনার পর হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের চিকিৎসকদের কক্ষে দেখা যায়, কক্ষটির আসবাব ও কিছু তৈজসপত্র ভাঙচুর হয়েছে। টেবিলের ওপরের কাচ ভেঙে পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জিনিসপত্র।

মেডিসিন ইউনিটের রেজিস্ট্রার মো. সোলায়মান বলেন, চিকিৎসকেরা নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তবু রোগীর স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাই এ ওয়ার্ডের নিরাপত্তা বাড়ানোসহ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা জরুরি।

চিকিৎসকদের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে। রোববার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। চিকিৎসক তিনজন হলে রোগী থাকেন ৪০০ জন। তাই চিকিৎসকেরা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। কিন্তু চিকিৎসকদের অবহেলায় যে রোগীর মৃত্যু হয়, সেটা সঠিক নয়। চিকিৎসকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন রোগীদের সেবা দিতে। বিষয়টি মানবিক হওয়ায় মৃত ব্যক্তির ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এ জন্য থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাইনুল বলেন, মৃত ব্যক্তির ছেলে জুম্মন চিকিৎসকদের কক্ষে টেবিলের গ্লাস, চেয়ার ও কাপ-পিরিচ ভেঙে ফেলেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করে। বাবার মৃত্যুর কারণে মানবিক বিবেচনায় চিকিৎসকদের অনুরোধে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।