দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিলার পাসের খবরে খুশি শ্রুতলিখনে সহায়তা করা মেয়েটিও

বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নের উত্তর মৃদু কণ্ঠে নাবিলা বলে দিচ্ছেন, আর তা শুনে খাতায় লিখছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেপ্রথম আলো ফাইল ছবি

লালমনিরহাটে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম (১৮) মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। গতকাল রোববার ফলাফল প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানা যায়। নাবিলা উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে পরীক্ষার হলে শ্রুতলিখনে তাঁকে সহায়তা করা রহিমা খাতুন নামের মেয়েটিও বেশ খুশি।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতায় লালমনিরহাট শহরের চার্চ অব গড উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম জিপিএ–৩.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি লেখাপড়া শেষ করে তাঁর মা খন্দকার ফারজানা আফরিনের মতোই মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চান। পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চাও চালিয়ে যেতে চান।

নাবিলা তাবাসসুম শ্রুতলিখন পদ্ধতিতে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের দ্বিতীয় তলার ১১২ নম্বর কক্ষে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁকে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ২০ মিনিট বেশি দেওয়া হয়। পরীক্ষার হলে শ্রুতলিখনে তাঁকে সহায়তা করেছে লালমনিরহাটের আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন। সে বলে, ‘পরীক্ষার হলে মৃদু কণ্ঠে নাবিলা আপু প্রশ্নের উত্তরগুলো বলে দিয়েছে, আমি সেই উত্তর শুনে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়েছি। আপু জিপিএ–৩–৮৯ পেয়েছে জেনে ভালো লাগল। আমি নিজেও খুশি একজন অদম্য মেধাবী ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রীকে শ্রুতলিখন পদ্ধতিতে পরীক্ষার হলে সহায়তা করতে পেরে।’

নাবিলা তাবাসসুম ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বেসরকারি সংস্থা আরডিআর পরিচালিত লালমনিরহাট শহরের পাশে হাঁড়িভাঙ্গা এলাকায় অবস্থিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। পুনর্বাসন কেন্দ্রটির অ্যাডমিন অ্যান্ড আউটরিচ অফিসার প্রদীপ কুমার রায় বলেন, শুধু পড়াশোনায় নয়, অদম্য মেধাবী ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চায় সুনাম অর্জন করেছেন।
নাবিলা তাবাসসুম বলেন, ‘আমার দুচোখে আলো নেই। শিক্ষা ও সংগীতের মাধ্যমে আমার অন্তরের আলোয় আলোকিত হতে চাই। আমি সাধ্যমতো সেই চেষ্টা করছি।’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাবাসসুমের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন চার্চ অব গড উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সহিদার রহমান ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক পার্থ সারথি আচার্য।

আরও পড়ুন

নাবিলার মা স্কুলশিক্ষক ফারজানা আফরিন বলেন, ‘আমার মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এই সাফল্য অর্জন করেছে। সে আরও সামনে এগিয়ে যেতে চায়। আমার মতো শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চায়। আমরা নাবিলার জন্য গর্ব অনুভব করি। আপনারা সবাই নাবিলার জন্য দোয়া করবেন, যেন সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’

মেয়ের এই সাফল্যে পরিবারের সবাই আনন্দিত বলে জানিয়েছেন সরকারি চাকরিজীবী বাবা মো. আল এমরান খন্দকার।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিলা উত্তর বলে দিচ্ছেন, খাতায় লিখছে অন্যজন’ শিরোনামে একটি সচিত্র বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।