রাজশাহী-২ আসনে ভোট পড়েছে কম, রাজশাহী-১ আসনে সবচেয়ে বেশি
রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে। তখন পর্যন্ত আসনটির সব কেন্দ্র মিলিয়ে মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই আসনের ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা (কাঁচি প্রতীক)। ভোটের আগে থেকে আলোচনা ছিল, আসনটিতে এবার দুই বাদশার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ থাকবে, কিন্তু ভোট পড়ার কম হার, সে কথা বলছে না।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, এখানে ১৪ দলের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের একাংশ মিথ্যাচার করেছে। তারা একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত ও বিরক্ত হয়ে ভোট দিতে কম এসেছেন। তা ছাড়া এখনো বেলা আছে। আশা করা যায়, মানুষ ভোট দিতে আসবেন।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে। এই আসনে তখন পর্যন্ত ভোট পড়ার হার ৩২ শতাংশ। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) থাকার কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় এই আসন আলোচিত ছিল। এই আসনে নৌকার প্রার্থী টানা তিনবারের সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
এই আসনের তানোর উপজেলায় ভোট পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর (কাঁচি প্রতীক) প্রভাব রয়েছে। সকাল থেকেই এই উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। সকাল ১০টায় এই উপজেলায় ভোট পড়ার হার ছিল ১৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
ভোট পড়ার হার বেশি সম্পর্কে নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। এ জন্যই মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসছেন। এটাকে তিনি একটা শুভ ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে ভোট পড়েছে ২৫ শতাংশ। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। নৌকার প্রার্থী অনেকটা নির্ভার। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে ভোট পড়েছে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নৌকা পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এই কেন্দ্রে প্রচারণার সময় সহিংস ঘটনা ঘটেছে। দুপুর পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলাকালে তেমন কোনো সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ এই আসনে অবস্থান করছেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে ভোট পড়েছে ১৮ শতাংশ। রাজশাহী-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হানুল হক। এই আসনে ককটেল বিস্ফোরণ, ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ
সারা দেশে ৩টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে গড়ে ২৬ দশমিক ৩৭%
নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর লাঙ্গলের প্রার্থীর ভোট বর্জন
রাজশাহীতে সকালে বেশ ঠান্ডা পড়েছিল। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কুয়াশাও ছিল। সকালে রাজশাহী-২ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল আটটায় প্রায় ভোটকেন্দ্র ফাঁকা ছিল। নগরের বি বি হিন্দু একাডেমিতে সকাল ৮টা থেকে ৮টা ১১ মিনিট পর্যন্ত কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসেননি। ৮টা ১২ মিনিটে অশীতিপর বৃদ্ধ সন্তোষ সিংহ (৮২) তাঁর ৬২ বছর বয়সী ছেলে অরুণ সিংহকে সঙ্গে করে প্রথম ভোট দিতে আসেন। এই কেন্দ্রে মোট ভোট ৩ হাজার ৮৬২। সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৬৫টি। সকাল ১০টায় ভোট পড়েছে ১৫৫টি। বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশা ও শীত বেশ ছিল। এরপর একটু ভোট পড়ার হার বেড়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৫৩৫টি। ভোট পড়ার হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
নগরের আহম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোট ৪ হাজার ২৯৫। এই কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৮৮টি। দুপুর ১২টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৩২৩টি। ভোট পড়ার হার ছিল ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।