অজ্ঞাতপরিচয় সেই নারীর লাশ দাফন, পাশে পড়ে থাকা শিশুটির কী হবে?

মরদেহ উদ্ধার
প্রতীকী ছবি

নেত্রকোনার পূর্বধলায় সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় নারীর লাশ দাফন করা হয়েছে। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাঁকে শহরের সাতপাই পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত ও বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

এদিকে ওই নারীর লাশের পাশে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশুটির এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসাধীন শিশুটির দেখাশোনা করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যসহ দুই ব্যক্তি। ঘটনার পাঁচ দিন চলে গেলেও শিশু এবং ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

আরও পড়ুন

ওই নারীর লাশ গতকাল শনিবার দাফন করা হয় জানিয়ে নেত্রকোনা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অজ্ঞাতপরিচয় নারীর লাশ দাফন করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, শিশুটি ওই নারীরই হবে। তবুও চূড়ান্ত নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য শিশু এবং ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। আঙুলের ছাপ না মেলায় নারীর পরিচয় নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। তবে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও পরিচয় শনাক্তে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পূর্বধলার কাছিয়াকান্দা গ্রামের লোকজন ২৫–৩০ বছর বয়সী এক নারীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। লাশের পাশে একটি ছেলেশিশু অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল। তার বয়স আনুমানিক দুই বছর। পরে পুলিশ ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। শিশুটিকে উদ্ধার করে সর্বশেষ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বর্তমানে শিশুটি ওই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সেখানে শিশুটির দেখাশোনা করছেন একই উপজেলার বিশকাকুনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুস্তম আলী ও একই এলাকার সুজাত মিয়া। রুস্তম আলী বলেন, ‘শিশুটি এখনো সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়নি। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে কেঁদে ওঠে। নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। বাচ্চাটিকে নিয়ে আমরা বিপদে আছি। আমাদের ধারণা, বাচ্চাটি ওই নারীরই হবে। দুর্বৃত্তরা ওই নারীকে হত্যার পর শিশুটিকেও মেরে ফেলতে চেয়েছিল। শিশুটির প্রতি খুবই মায়া জমে গেছে। তাকে এভাবে হাসপাতালে ফেলে রেখে যাওয়া যাচ্ছে না। আর কত দিন এভাবে হাসপাতালে থাকতে হবে, তা বলতে পারছি না।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম জানান, শিশুটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন থাকলেও স্ক্যানে কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঘটনাও ঘটেনি। শিশুটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায়, দ্রুতই সুস্থ হবে উঠবে।

শিশুটির বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বধলা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শিশুটি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছি। পরিচয় না পাওয়ায় শিশুটিকে অনেকেই দত্তক নিতে চাইছেন। সুস্থ হওয়ার পর কমিটির মাধ্যমে দত্তক দেওয়ার আহ্বান করা হবে। না হলে শিশুটিকে আজিমপুরে ছোটমণি নিবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’