এক দিনের বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গায় টানা তাপপ্রবাহের বিদায়, জনমনে স্বস্তি

চুয়াডাঙ্গায় টানা ৩২ দিনের তাপপ্রবাহের ভোগান্তি শেষে গতকাল সোমবার বহুল প্রতীক্ষিত বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে শিলাবৃষ্টির পর রাতে শীতল পরিবেশ অনুভূত হতে থাকে
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সোমবার বহুল প্রতীক্ষিত বৃষ্টির পর চলতি মৌসুমে তাপপ্রবাহের আপাতত অবসান হয়েছে। এপ্রিল মাসের ২৬ দিন এবং মে মাসের প্রথম ৬ দিন মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ভোগান্তি শেষে এই বৃষ্টি স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে জনজীবনে।

পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার গতকাল ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করে। বিকেলে শিলাবৃষ্টির পর রাতে শীতল পরিবেশ অনুভূত হতে থাকে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সূর্য ও মেঘের লুকোচুরিতে রোদ একটানা মাটিতে পড়তে পারেনি।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ সন্ধ্যা ছয়টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে আর্দ্রতা রয়েছে ৬৩ শতাংশ। গতকাল একই সময়ে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন

গতকালের এই বৃষ্টিকে কৃষি বিভাগ আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে জানান, বর্তমানে জেলাজুড়ে আউশের বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। সেখানে পানির প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া খরার কারণে আম ও লিচু যেভাবে ঝরে যাচ্ছিল, তা বন্ধ হবে এবং সবজিখেতের উপকার হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর এপ্রিল মাসে জেলায় ৪ দিনে ২৯ মিলিমিটার এবং মে মাসের ১০ দিনে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। সেখানে চলতি মৌসুমের এপ্রিল মাসের ২৩ এপ্রিল মাত্র এক দিন ২ মিলিমিটার এবং গতকাল ৬ মে ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ৩৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক ধরা হয়ে থাকে এবং ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে তাপপ্রবাহ গণনা শুরু হয়। সে হিসাবে, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। গতকাল ছিল মৌসুমের সর্বশেষ তাপপ্রবাহ। এদিন জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গার পর্যবেক্ষণাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, এ জেলায় চলতি মৌসুমে মার্চ মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ছিল ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২০ মার্চ) থেকে শুরু করে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩০ মার্চ) রেকর্ড করা হয়। এ মাসে দুই দিন (১৫ ও ৩০ মার্চ) মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায় এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ ভয়াবহ রূপ নেয়। মাঝারি তাপপ্রবাহ দিয়ে মাস শুরু হয়। ১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে শুরু করে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। ৬ এপ্রিল মৌসুমের প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা দেয় এ জেলায়। এদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৩০ এপ্রিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ে চুয়াডাঙ্গা। এদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলের ১০ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এই জেলায়।

এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিবেচনায় মাসের ৩০ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ছিল মাত্র ৪ দিন এবং বাকি ২৬ দিন ছিল মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এপ্রিল মাসের ৮ তারিখে ছিল তুলনামূলক শীতলতম দিন। এদিন জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরও পড়ুন

পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে ২ দিন মৃদু তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়, ৯ দিন মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৮ দিন তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৭ দিন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

এদিকে এপ্রিলের ধারাবাহিকতায় মে মাসেও তাপপ্রবাহ সমানে চোখ রাঙায়। ১ মে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২ মে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩ মে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ মে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ মে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং ৬ মে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। অর্থাৎ মে মাসেও প্রথম ছয় দিনের মধ্যে চার দিনই ছিল তীব্র তাপপ্রবাহ। এ ছাড়া এক দিন মৃদু ও এক দিন মাঝারি তাপপ্রবাহ। দীর্ঘ তাপপ্রবাহের পর আজ থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন