বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অরাজকতা চলছে

অধ্যাপক এম এ এম ইয়াহিয়া

শিক্ষক লাঞ্ছনা, প্রশাসনের নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম নিয়ে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক সম্প্রতি সরব হয়েছেন। এসব শিক্ষকের নেতৃত্বে আছেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক এম এ এম ইয়াহিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক নানা ঘটনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বরাবারই ভালো ছিল। এ নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যার খবর আমরা পাইনি। তবে সম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষক নিগ্রহের খবর জেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কেন ঘটল?

এম এ এম ইয়াহিয়া: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতাই এর মূল কারণ বলে আমি মনে করি। প্রক্টরের অদূরদর্শিতার কারণেও সেটা হতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে একজন ছাত্র তাঁর মা, খালা খালুসহ একজন শিক্ষকের বসার কক্ষে যখন আশ্রয় নেয়, তাকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে না দিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করার পেছনে প্রক্টরের দুরভিসন্ধির যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

সংবাদ সম্মেলন করে আপনি এবং কিছু শিক্ষক সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ব্যর্থতায় দীর্ঘ সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আরও বিস্তারিত বলবেন?

এম এ এম ইয়াহিয়া: একাডেমিক কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি সর্বোচ্চ ফোরাম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সর্বোচ্চ প্রশাসনের একাডেমিক কাউন্সিলের অধিবেশন ডাকার বিষয়ে সচরাচর অনীহা বা কালেভদ্রে অধিবেশন ভার্চ্যুয়ালি ডাকলেও সেখানে ভিসি মহোদয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে একনায়কতান্ত্রিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। গত বছর ৭০ জন ছাত্রের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সব কর্মকাণ্ড শেষ হলেও যথাসময়ে একাডেমিক কাউন্সিলের অধিবেশন না ডাকার কারণে ডিগ্রি পেতে তাঁদের এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। গত বছর প্রথম বর্ষের ছাত্রদের ওরিয়েন্টেশন এক সেমিস্টার শেষ করে দ্বিতীয় সেমিস্টারের মাঝামাঝি সময়ে হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের ক্লাস শুরু হলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে এখনো ক্লাস শুরুর কোনো উদ্যোগ নেই। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বাকৃবি প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না।

প্রশ্ন :

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে অরাজকতার অভিযোগ তুলেছেন আপনারা। এ অভিযোগ কতটুকু যৌক্তিক?

এম এ এম ইয়াহিয়া: বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোতে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশের জন্য সুনির্দিষ্ট কমিটি রয়েছে। সাম্প্রতিক শিক্ষক নিয়োগে কৃযিপ্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের ফার্মস্ট্রাকচার বিভাগের কমিটির সুপারিশ না করার পরও একজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাঁকে কৃষি অনুষদের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে দেওয়া হয়েছে। বাকৃবির ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা ও অরাজকতা। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অরাজকতা চলছে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন আপনারা। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব ঘটেছে?

এম এ এম ইয়াহিয়া: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে অধিকতর উন্নয়নের জন্য ৬৬৯ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। গত সাড়ে তিন বছরে এই উন্নয়নের মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ মেরামতিকাজ সম্পন্ন হয়েছে। উন্নয়নের কোনো কাজই হয়নি। অন্যান্য ছোট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেখানে প্রথম বরাদ্দের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় বরাদ্দের কাজ শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অদূরদর্শিতার কারণেই বরাদ্দের টাকা আবার একনেকে অনুমোদনের জন্য ফেরত গেছে। একই কারণে গত বছর এপিএতে (বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি) বাকৃবির পারফরম্যান্স ৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫।

প্রশ্ন :

গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম শাসক দল আওয়ামী লীগের সমর্থক শিক্ষকদের একটি জোট। ফোরাম দুই ভাগে বিভক্ত। এই বিভাজন কেন? অনেকে বলেন, এর মধ্যে কোনো আদর্শিক বিষয় নেই। আছে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থের দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। কী বলবেন এ নিয়ে?

এম এ এম ইয়াহিয়া: গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম বাকৃবিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সংগঠনটি দ্বিধাবিভক্ত। উপাচার্য মহোদয় তাঁর স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড বিনা বাধায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছেন বলে আমরা মনে করি।

প্রশ্ন :

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয় নিয়ে আপনারা যেসব অভিযোগ করেছেন, এসব কি ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছেন বা জানানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন? এসব বিষয়ের তো সুরাহা প্রয়োজন। না হলে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়তে পারে।

এম এ এম ইয়াহিয়া: এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্বের অংশ।

আরও পড়ুন