‘পড়ালেখার কোনো বয়স নেই। আমি বয়সের কাছে মাথা নত করিনি। পারিবারিক দায়িত্বের চাপে পড়াশোনার সময়ে কাজ করেছি। মনের সুপ্ত বাসনা পূরণে আবার বুড়ো বয়সে পড়ালেখা করেছি। তখন মনে হয়েছে, পড়ালেখার জন্য ইচ্ছাশক্তিটাই প্রধান।’
পাবনায় অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবেই অনুপ্রেরণার কথাগুলো বলছিলেন ৭৫ বছর বয়সী আবদুল হাই মিয়া। তিনি ৬৫ বছরে এইচএসসি এবং ৭৫ বছর বয়সে আইন বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছেন। আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করার সময় পেশাটির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। এরপর বৃদ্ধ বয়সে নিজের পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগান নিয়ে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে চলছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা উৎসব। আজ শুক্রবার সকালে পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে ছিল এর আয়োজন। এতে জেলার ৯ উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
পাবনায় অনুষ্ঠান শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৯টায়। তবে এর আগেই সকাল আটটা থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই কানায়–কানায় ভরে ওঠে বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র প্রাঙ্গণ। সেখানে নিবন্ধন নম্বর দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা সকালের নাশতা, ক্রেস্ট ও উপহার সংগ্রহ করে।
এরপর ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা ও ফটোফ্রেমে নিজেদের ছবি তুলতে মেতে ওঠে। ঘড়ির কাঁটায় যখন সকাল ১০টা, তখন শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। এরপর ঢাকার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর পাবনা প্রতিনিধি সরোয়ার মোর্শেদ। এরপর অনুষ্ঠানটির থিম সংয়ের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করে সুপ্তনীড় ড্যান্স স্টুডিও। মুগ্ধ শিক্ষার্থীদের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।
অতিথির বক্তব্যে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আখতার জামান বলেন, ‘সনদই সবকিছু নয়, সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। তোমরাই আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তোমাদের মেধা ভালো কাজে লাগাবে, এটাই প্রত্যাশা।’
শিক্ষকদের কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে গান ও নৃত্য। নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী ঝড়া ও বাপ্পি। গান নিয়ে হাজির হয় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী অহনা। বন্ধুর সঙ্গে গানে গানে মেতে ওঠে বাকি শিক্ষার্থীরাও।
শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান মো. হাবিবুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তোমরাই আগামী, তোমরাই দেশ। তোমাদের হাতেই বাংলাদেশ। সুন্দর দেশ গড়তে, তোমরা ভালো মানুষ হবে, এটাই প্রত্যাশা।’
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে না বলার শপথ করান। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে গানে। গান পরিবেশন করে শহরের ‘কোলাহল’ ব্যান্ড। গানের সঙ্গে আনন্দ–উল্লাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। হাসি–আনন্দ ও করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। শহরের কৃষ্ণপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে হাজির হয় শিক্ষার্থী বাকিরা সুলতানা। সে বলে, ‘অনুষ্ঠানে বেশ মজা হচ্ছে। আমার খুব ভালো লেগেছে। ছোটবেলা থেকে গণিত উৎসব, ভাষা প্রতিযোগে অংশ নিয়েছি। এখন জিপিএ-৫ পেয়ে সংবর্ধনা পেলাম।’
অনুষ্ঠানে শেষ পর্বে গান পরিবেশন করে জেলা শহরের ব্যান্ড কোলাহল। গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের হাসি, আনন্দ আর করতালিতে শেষ হয় আয়োজন।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় রয়েছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।