‘ছেলেই নাই, আর পরিচয়পত্র দিয়ে কী হইব?’

মেঘনা নদীতে নৌকা ডুবে কনস্টেবল সোহেল রানা ও তাঁর স্ত্রী-মেয়ে মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছে তাঁর ছেলে
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় পর্যটকবাহী নৌকা ডুবে নিখোঁজ হন হাইওয়ে থানার কনস্টেবল সোহেল রানা, তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। আগেই তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আজ সোমবার সকালে ভেসে ওঠে সোহেল রানার লাশ। তবে তাঁর চার বছর বয়সী ছেলে রাইসুল ইসলামের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

উদ্ধার করার পর সোহেল রানার লাশ আনা হয় ভৈরব নৌ থানায়। প্যান্টের পকেট থেকে পাওয়া যায় মানিব্যাগ ও কর্মস্থলের পরিচয়পত্র। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সোহেল রানার বাবা মো. আলীম। ছেলের পরিচয়পত্র দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। বললেন, ‘আমার সব শেষে হয়ে গেছে। সোহেল আর আমার কাছে আসব না। ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করব না। ছেলেই নাই, আর পরিচয়পত্র দিয়ে কী হইব?’

এ সময় উদ্ধারকর্মীরা মো. আলীমকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাই যেন ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি–নাতনি হারানো আলীমকে শান্ত করতে পারছিল না। শেষে তাঁকে লাশের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তখন মো. আলীম গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘কী হইব এত ছবি তুলে। আমার যা গেছে, তা তো আর ফিরে আইব না।’

আরও পড়ুন
মেঘনা নদী থেকে কনস্টেবল সোহেল রানা লাশ উদ্ধার করে ভৈরব নৌ থানায় আনা হয়। এ সময় সেখানে আসেন তাঁর বাবা মো. আলীম
ছবি: প্রথম আলো

সোহেল রানার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ফাতেহাবাদ গ্রামে। মো. আলীম ও রওশন আরা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সোহেল রানা দ্বিতীয়। ভৈরব হাইওয়ে থানায় যোগ দেন সাত মাস আগে। স্ত্রী–সন্তান নিয়ে থাকতেন ভৈরবেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত শুক্রবার বিকেলে তিনি নদীর পাড়ে বেড়া আসেন। একপর্যায়ে তাঁরা পর্যটকবাহী নৌকায় চড়েন। সন্ধ্যায় বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই সোহেল রানার মা–বাবা ও পরিবারের সদস্যরা ভৈরব আসেন।

মো. আলীম বলেন, ‘আমি মামলা করছি। বাল্কহেডের সুকানি আর চালককে আসামি করছি। তারা যেন ছাড় না পায়। ছাড় পাইলে আরও কষ্ট পামু।’

আরও পড়ুন

ওই দুর্ঘটনায় সোহেল রানার স্ত্রী মৌসুমী বেগম (২৫), তাঁদের সাত বছর বয়সী মেয়ে ইভা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কেবল সোহেল রানার ভাগনি মারিয়া ভূঁইয়া অন্যদের সহযোগিতায় বেঁচে ফিরতে পেরেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সোহেল রানার প্রথম জানাজা হবে ভৈরব হাইওয়ে থানায়। তারপর লাশ পাঠানো হবে গ্রামের বাড়ি। স্ত্রী ও মেয়ের লাশও গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

মেঘনা নদীতে পাশাপাশি দুটি রেল ও একটি সড়কসেতু রয়েছে। তিনটি সেতুকে ঘিরে ভৈরব প্রান্তে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঘাটে বেশ কয়েকটি পর্যটকবাহী নৌকা রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নৌকার মাধ্যমে মেঘনা নদীতে ঘুরে বেড়ান। শুক্রবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে একটি নৌকায় ১৫ থেকে ১৮ জন আরোহী নিয়ে ঘুরতে বের হন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। এখন পর্যন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে আটজনের।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী বেলন চন্দ্র দে, তাঁর শ্যালকের স্ত্রী রুপা দে (২৬), সম্বন্ধীর মেয়ে আরাধ্য (১১), নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামের কলেজপড়ুয়া আনিকা বেগম ও ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকার স্বপন মিয়ার মেয়ে সুবর্ণা বেগম (২০)।