চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুবলীগের সাবেক নেতা খাইরুল আলম ওরফে জেম (৪৮) হত্যা মামলার মূল হোতাদের ধরতে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুল ওদুদ। হত্যা মামলায় পাঁচজন গ্রেপ্তারের ঘটনাকে পুলিশের ‘সাজানো নাটক’ বলেও মনে করেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়কদের আড়ালের চেষ্টা হতে পারে বলে মনে করছেন খাইরুলের পরিবারের সদস্যরা।
গত বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উদয়ন মোড়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত খাইরুল আলমের ওপর হামলা করে। এ সময় তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে তারা। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মারা যান তিনি। শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। খাইরুল আলম জেলা যুবলীগের সাবেক শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাউল হকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে সদর থানার পুলিশ ও ডিবি পুলিশ সদস্যদের যৌথ অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ প্রথম আলোকে বলেন, কোথা থেকে কখন এই পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো, তা খোলাসা করেনি পুলিশ। মূল হোতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান ও সামিউল হক লিটনকে (জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি) আড়াল করতে এবং আমাদের ঘোষিত (আন্দোলন) কর্মসূচিকে স্থিমিত করতে এই গ্রেপ্তার একটি সাজানো নাটক বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়কেরা শিখিয়ে-পড়িয়ে একসঙ্গে এই পাঁচ আসামিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। মূল হোতাদের ধরতে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই।
জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সংসদ সদস্য বলেন, প্রকাশ্যে অনেক মানুষের সামনে খাইরুলকে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ছয় হত্যাকাণ্ড, বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, চুরি, ছিনতাই—সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতি এর আগে হয়নি। সাধারণ মানুষ দারুণ ভয়ভীতির মধ্যে বাস করছে। ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্য পুলিশের চরম ব্যর্থতা ও পক্ষপাতমূলক আচরণই দায়ী।
সংসদ সদস্য মো. আবদুল ওদুদ আরও বলেন, খাইরুল হত্যা মামলার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পূর্বঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচি (ঘেরাও, অবরোধ ও হরতাল) পালন করা হবে। কর্মসূচির প্রস্তুতিও চলছে।
খাইরুল আলম হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর গত শনিবার মামলা নিয়েছে পুলিশ। খাইরুল আলমের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় পৌরসভার মেয়রসহ ৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্তে খাইরুলের আরেক ভাই মাহবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে, জেম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়কদের ছত্রছায়ায় ছিল তাঁরা (গ্রেপ্তার আসামিরা)। মূল হোতাদের বাঁচাতে নাটক সাজানো হয়েছে। তাঁদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মূল হোতাদের আড়াল করার চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’
সংসদ সদস্যদের অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব প্রথম আলোকে বলেন, কোথা থেকে, কখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। ওই এলাকায় আরও আসামি লুকিয়ে থাকলে তারা সতর্ক হয়ে যাবে। তবে এক স্থান থেকে নয়, আসামিদের দুই স্থান থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। কোথা থেকে হয়েছে, তার প্রমাণও আছে।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আবদুর রকিব বলেন, দুটি হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে হয়েছে। একটি ঘটনার সঙ্গে অন্য ঘটনার সম্পর্ক নেই। আতঙ্কিত হওয়ার মতো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তাঁরা কঠোরভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। সাফল্যও আছে।