বেলাবতে লালনসংগীতশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেওয়া মামলার প্রধান আসামির জামিন

নরসিংদীর বেলাবতে সাধুসঙ্গে আসা লালনশিল্পীদের ২০টি বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবিটি সোমবার দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় সাধুসঙ্গে আসা লালনসংগীতশিল্পীদের বাদ্যযন্ত্র গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি শেখ জাহাঙ্গীর (৩৫) জামিন পেয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে নরসিংদীর বেলাব আমলি আদালতের বিচারক মাহমুদুল হাসান খান শুনানি শেষে এ জামিন দেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, মামলার প্রধান আসামি শেখ জাহাঙ্গীরের জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিরা এখন এলাকাছাড়া, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে। যেকোনো সময় তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন।

গত রোববার দুপুরে বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের ড্রাগনবাগানের এক কোণে গড়ে তোলা আশ্রমে বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গুঁড়িয়ে দেওয়া বাদ্যযন্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল হামোনিয়াম, তবলা, একতারা, ডুগি, হাতবাড়া, খমক, দোতারা, সারিন্দা, ইউকুলেলে, গিটার ও বাঁশি। এ ঘটনায় গত সোমবার দিবাগত রাতে বেলাব থানায় ভুক্তভোগী শিল্পী খোকন চিশতী বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ছয়-সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তিন আসামি হলেন গ্রামটির বাসিন্দা শেখ জাহাঙ্গীর (৩৫), শেখ শাহীন (৩২) ও শেখ ফজলু (৫৮)।

আরও পড়ুন

আদালত পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলা হওয়ার পর সেদিন রাতেই বেলাব থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি শেখ জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর গত মঙ্গলবার বিকেলে শেখ জাহাঙ্গীরকে বেলাব আমলি আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠান। একই সময় তাঁর জামিন আবেদন করা হলে পরদিন বুধবার শুনানির দিন ধার্য করা হয়। সে অনুযায়ী, গত বুধবার বিকেলে আদালতে শুনানি শেষে বিচারক তাঁকে জামিন দেন। পরে তিনি কারাগার থেকে বের হন।

এদিকে মামলার পর থেকেই হামলাকারীদের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাটি সমঝোতা করতে চাইছেন। মামলা উঠিয়ে নেওয়ার শর্তে তাঁরা গুঁড়িয়ে দেওয়া বাদ্যযন্ত্রগুলোর ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করে ক্ষমা চাইতে আগ্রহী। কয়েক দফা আপসনামা হাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে মামলার বাদী ও লালনসংগীতশিল্পীদের কাছে ধরনা দিয়েছেন তাঁরা। তবে ভুক্তভোগী লালনসংগীতশিল্পীরা বলছেন, কোনো প্রকার সমঝোতা নয়, বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার বিচার চান তাঁরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুমন মিয়া নামের লালনভক্ত মৃত এক ব্যবসায়ীর চল্লিশা আয়োজন উপলক্ষে গত রোববার সকাল থেকেই লালনসংগীতশিল্পীরা ওই আশ্রমে এসে জড়ো হয়েছিলেন। বেলা দুইটার দিকে শেখ জাহাঙ্গীর নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাঁদের কাছে এসে পানি চান। পানি দেওয়ার পর শিল্পীদের তিনি গালিগালাজ শুরু করেন। পরে শিল্পীরা তাঁকে বাগানের বাইরে বের করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জাহাঙ্গীর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ৯-১০ জন মিলে লাঠি ও রড নিয়ে শিল্পীদের দিকে তেড়ে যান। ভয়ে শিল্পীরা দৌড়ে নদী পার হয়ে অপর প্রান্তে চলে যান। তাঁরাও নদী পার হয়ে দৌড়ে কয়েকজনকে ধরে মারধর করেন। পরে আশ্রমে ফিরে এসে শিল্পীদের ব্যবহৃত সব বাদ্যযন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন।