রাজশাহীতে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের
রাজশাহীতে চলছে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। রাজশাহী কলেজে আয়োজিত এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। তাদের সঙ্গে আসে অভিভাবকেরাও। সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটির এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। এ ছাড়া ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে থাকছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে আছে বিডিকম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা, আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিরা। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দলের কোচ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী আরশাদ মোমেন, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ জাহাঙ্গীর মাসুদ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইকবাল মতিন, রুয়েটের সিইসি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ, রুয়েটের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল কাদের জিলানী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন আহমেদ, রাজশাহী ম্যাথ ক্লাবের সভাপতি মো. মাসুদ রানা প্রমুখ।
রাজশাহী বন্ধুসভার উপদেষ্টা ফারুক হোসেনের সঞ্চালনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো রাজশাহী নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।
এত সকালে অনুষ্ঠানে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী আরশাদ মোমেন বলেন, শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনের মাধ্যমে ভালো করবে। তাঁরা ভবিষ্যতে দেশের জন্য সফলতা বয়ে আনবে।
রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও রাজশাহী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
উদ্বোধনীর পর সকাল সাড়ে ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষে রাজশাহী কলেজ অডিটরিয়ামে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ম্যাজিক শো ও প্রশ্নোত্তর পর্ব।
বগুড়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহরাবুর রহমান সকালেই উপস্থিত হয় রাজশাহী কলেজে। সে সপ্তম শ্রেণির ছোটবোন মুসফিরা জান্নাতকে নিয়ে বাসযোগে বগুড়া থেকে এসেছে। তারা দুজনই ফিজিক্স অলিম্পিয়াড রাজশাহী আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিয়েছে। মেহরাবুর বলে, ‘আজ সকাল ৬টায় বগুড়া থেকে গাড়িতে উঠেছি। দুই ভাইবোন মিলে চলে আসি নির্ধারিত সময়ের আগেই। এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
রাজশাহী গভ. নিউ ডিগ্রি কলেজেরে শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন প্রথমবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে বলে, এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। এই ধরনের আয়োজনে থাকতে পেরে ভালো লাগছে। রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইথিকা জাইমা বলে, এখানে অংশ নেওয়ার জন্য খুব সকালে উপস্থিত হয়েছে সে। পরে লাইন ধরে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়।
অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা যায় অভিভাবক জালাল উদ্দিন আহমদকে। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের কুমারপাড়ায়। তিনি বললেন, তাঁর ছোট ছেলে ফয়েজ আহমেদ পরীক্ষা দিচ্ছে। তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তাঁরা সবাই প্রথম আলোর এই ধরনের আয়োজনে অংশ নেয়। এই আয়োজনগুলোতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদর আগ্রহ বেশি।
১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, নবম-দশম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা ডি ক্যাটাগরি। রাজশাহীর এই পর্বে সাড়ে তিন শর বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
২০২৩ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। সেটিকে সামনে রেখে দেশব্যাপী ১৩তম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। বাছাইপর্বের নির্বাচিতদের নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। ইতিমধ্যে ঢাকা, যশোর ও বরিশালে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে জাতীয় উৎসব। পরে জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। ক্যাম্প শেষে বাছাইকৃতদের নিয়ে গঠিত হবে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দল। ওই দলই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।