মানুষের সহায়তায় মেডিকেলে ভর্তি, পড়াশোনার খরচ চলবে কীভাবে শান্তার
সাত বছর ধরে দুই গ্রামের ৮-১০টি বাড়িতে গিয়ে গাভির দুধ দোহন করেন শিবানী সেন (৩৭)। সেই দুধ ভ্যানে করে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে নিয়ে বিক্রি করেন। শিবানী সেনকে এখন সবাই সম্মান করেন। তাঁর মেয়ে শান্তা সেন এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। অন্যের দেওয়া টাকায় মেয়েকে মেডিকেলে ভর্তি করলেও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
শিবানী সেনের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার আরাজি মিতনা গ্রামে। তাঁর মেয়ে শান্তা এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৬৯ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ইতিমধ্যে ভর্তিও হয়েছেন। দূরের মেডিকেলে খরচের কথা ভেবে মেয়েকে স্থানান্তর (মাইগ্রেশন) করে যশোর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন শিবানী।
গত সোমবার দুপুরে শিবানী সেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি ঘর। তক্তার বেড়া। ওপরে টিনের ছাউনি। পাশে টিনের ছাউনি ছোট্ট একটি রান্নাঘর। পাশে একটি টিনের গোয়ালঘর। তখন শান্তা ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। শিবুপদ সেন ও শিবানী সেনের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। শিবুপদ সেন মাঠে দিনমজুরের কাজ করেন। সম্বল বলতে ২০ শতক ভিটেবাড়ি আর মাঠে ৫২ শতক ধানের জমি।
শান্তার ভাই সমীরণ সেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের গণিত শেষ বর্ষের ছাত্র। শান্তা ছোট। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছেন। ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় নড়াইল সদর উপজেলার চাঁচড়া এনইউবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। ২০২৩ সালে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
শিবানী সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। আমি খুবই খুশি। শান্তাকে পাবনা মেডিকেলে ভর্তি, সেখান থেকে যশোরে নিয়ে আসা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গ্রামের চারজন, পাশের গ্রামের দুজন ও শান্তার দুই মামা এই টাকা দিয়েছেন। হিসাব করে দেখেছি, সব মিলিয়ে বছরে শান্তার পড়ালেখার খরচ বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাগবে। এই টাকা কোথা থেকে আসবে, সেই দুশ্চিন্তায় আছি।’
বাবা শিবুপদ সেন বলেন, পৈতৃক সূত্রে ৭২ শতক জমি পেয়েছেন। ২০ শতক বসতবাড়ি। ৫২ শতক ধানের জমি। দুই ফসলি জমির ধান দিয়ে বেশি দিন চলে না। অন্যের খেতে কাজ করেন। প্রতিদিন ৩০০ টাকা মজুরি পান। সব দিন কাজ হয় না। আয় কম, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ বেশি। মেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চান। তবে কীভাবে করবেন, এখনো জানেন না।
শান্তা সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার পড়ালেখার জন্য মা-বাবা অনেক কষ্ট করছেন। তাঁদের জন্য আজ আমি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পেরেছি। যত কষ্টই হোক, ডাক্তার হব।’
সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. টিপু সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, শিবানী ও শিবপদ অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়ে দুটিকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। দুজনই খুব মেধাবী। মেয়েটা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তাঁদের একার পক্ষে মেয়েকে মেডিকেলে পড়ানো সম্ভব নয়। আর্থিক সহায়তা পেলে মেয়েটা অনেক দূরে যাবে।