প্রচণ্ড গরমে দাঁড়াতে যান ট্রেনের জানালার পাশে, সহযাত্রীর মারধরে মৃত্যু

নিহত ঝুমুর কান্তি বাউলছবি: সংগৃহীত

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ‘ঢাকা মেইল’ট্রেনে চেপে রাজধানীতে নিজের কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ঝুমুর কান্তি বাউল (৪২)। শেষ বগিতে বেশ ভিড় হওয়ায় ভেতরে অতিরিক্ত গরম অনুভূত হচ্ছিল। খানিক স্বস্তির আশায় জানালার পাশে দাঁড়াতে যান তিনি। কিন্তু সেখানে তিনি আসনে থাকা এক যাত্রীর বাধার মুখে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই যাত্রীর মারধরে ট্রেনের ভেতর অচেতন হয়ে পড়েন ঝুমুর। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নরসিংদী রেলস্টেশনে ট্রেনটির যাত্রাবিরতির সময় এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ঝুমুরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

আরও পড়ুন

নিহত ঝুমুর কান্তি বাউল নরসিংদী শহরের বীরপুর এলাকার বাসিন্দা এবং রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। ট্রেনে চেপে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি।

রেলওয়ে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে ঢাকা মেইল ট্রেনটি। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে এটি নরসিংদী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। ভিড়ের মধ্যে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ঝুমুর ট্রেনের শেষ বগিতে ওঠেন। বগির ভেতরে ভিড় এড়িয়ে একটু স্বস্তিতে দাঁড়ানোর জন্য দুই আসনের মাঝের অংশে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় ঝুমুরকে জানালার পাশ থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন মনজুর মিয়া নামের এক যাত্রী।

নিহত ঝুমুর কান্তি বাউল নরসিংদী শহরের বীরপুর এলাকার বাসিন্দা এবং রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। ট্রেনে চেপে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এর একপর্যায়ে ঝুমুরকে লাথি মারেন মনজুর। সেই সঙ্গে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষিও মারেন তিনি। এ সময় ঝুমুর অচেতন হয়ে ট্রেনের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ট্রেনের যাত্রীদের সহায়তায় তাঁকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়।’

বায়েজিদ রাব্বি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘জানালার পাশে দাঁড়ানোর মতো তুচ্ছ একটা বিষয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটি ঘটে। মনজুর মিয়াকে আমরা কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত আটকে রেখে রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’

জানালার পাশে দাঁড়ানোর মতো তুচ্ছ একটা বিষয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাটি ঘটে। মনজুর মিয়াকে আমরা কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত আটকে রেখে রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।
বায়েজিদ রাব্বি, প্রত্যক্ষদর্শী

এদিকে ঝুমুর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানান তাঁর স্ত্রী বন্যা বাউল। তিনি বলেন, তিন বছর আগে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি (ঝুমুর) বেশ সুস্থ ছিলেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন বন্যা।

অভিযুক্ত মনজুরকে গ্রেপ্তারের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের লাশটি হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন