ইউএনওর স্বামীকে মারধরের মামলায় আ.লীগ নেতার ছেলে কারাগারে

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদা পারভীনের স্বামীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতার ছেলে শামিম হোসেনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১২টার পর সোনাতলা থানায় মামলাটি করেন ইউএনওর গাড়িচালক ফেরদৌস হোসেন। মামলায় আসামিকে আদালতে নেওয়া হলে তাঁকে কারাগারে পাঠান বিচারক।

গ্রেপ্তার শামিম হোসেন সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুল আলমের ছেলে। শামিমের সঙ্গে তাঁর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ছেলেকেও আটক করা হয়েছিল। তবে এজাহারে নাম না থাকায় তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে এবার সোনাতলা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছে।

সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈকত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ইউএনওর গাড়িচালক গতকাল রাতে মামলা করেন। আসামি শামিম হোসেনকে আজ বগুড়া আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া শামিমের কিশোর ছেলের নাম এজাহারে না থাকায় তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইউএনও সাঈদা পারভীনের স্বামীর নাম আল আমিন শিকদার। তিনি পেশায় একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার। আল আমিন শিকদার তাঁর স্ত্রী সাঈদা পারভীনের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে শামিম হোসেন ও তাঁর ছেলের হাতে লাঞ্ছিত হন তিনি।

আরও পড়ুন

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ইউএনও সাঈদা পারভীনের স্বামী আল আমিন শিকদার গতকাল বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখতে যান। সেখানে উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শামিম হোসেন তাঁর কিশোর ছেলেকে নিয়ে খেলা দেখছিলেন। খেলা নিয়ে কটূক্তি করেন তাঁরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ইউএনওর স্বামী আল আমিন শিকদারের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় শামিম ও তাঁর ছেলের। এ সময় আল আমিন শিকদারকে মারধর করা হয়। পুলিশ পরে দুজনকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ইউএনও সাঈদা পারভীনের অভিযোগ, ‘উপজেলা পরিষদ চত্বরে শামিম নামের বহিরাগত এক ব্যক্তি এবং তাঁর ছেলে আমার স্বামীর ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেন।’

তবে এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন শামিমের বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদ চত্বর-সংলগ্ন বাসায় ছেলে ও নাতিকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন। বিকেলে উপজেলা পরিষদের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ইউএনওর বাসার সামনের রাস্তায় গতিরোধকে হোঁচট খেয়ে তাঁর নাতি পড়ে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইউএনওর স্বামী। অসাবধানতাবশত তাঁর গায়ে ধাক্কা লাগে। সামান্য এ ঘটনার জেরে তাঁর ছেলে ও নাতিকে আটক করে পুলিশ। পরে থানায় মারধরের মামলায় শামিমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

তিন আনসার সদস্য প্রত্যাহার

ইউএনওর স্বামীকে মারধরের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁদের আজ সোনাতলা থেকে প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন তিন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট শেখ ফিরোজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সোনাতলার ইউএনও সাঈদা পারভীন তিন আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন। এ কারণে জামিরুল ইসলাম, ইমারত আলী ও মোখলেছুর রহমান নামের আনসারের তিন সদস্যকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নতুন তিন সদস্যকে সেখানে পাঠানো হয়েছে।