ক্ষতিপূরণ দিতে নারাজ সেলফি কর্তৃপক্ষ, চার দিন ধরে আটক ১৫টি বাস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের দাবিতে চার দিন ধরে সেলফি পরিবহনের ১৫টি বাস আটকে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠেছবি: প্রথম আলো

বেপরোয়া গতির ‘সেলফি’ পরিবহনের বাসচাপায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজের মৃত্যুতে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে চার দিন ধরে পরিবহনটির ১৫টি বাস আটকে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত বাসগুলো ছাড়া হবে না বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তবে এ দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

গত বৃহস্পতিবার সকালে রুবেল পারভেজ নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের বাস আটকানো শুরু করেন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রুবেলের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ নিয়ে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মিলে দুই দফায় আলোচনা হলেও সমাধান হয়নি।

শিক্ষার্থীদের দাবি, নিহত রুবেলের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে মালিকপক্ষ এ পরিমাণ টাকা দিতে নারাজ। তারা প্রথম আলোচনায় তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল। সর্বশেষ গতকাল শনিবার রাতেও আলোচনায় বসে দুই পক্ষ। তবে সেখানেও কোনো ধরনের সমাধান হয়নি।

আরও পড়ুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এ সময় সেলফি পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে একটি বাস যাত্রীদের চাপা দেয়। এতে রুবেলসহ দুজন নিহত হন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই দিনই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের ২০টি বাস আটক করেন। পরদিন শুক্রবার সকালে আরও ৫টিসহ মোট ২৫টি বাস আটক করা হয়। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ১০টি বাস ছেড়ে দেওয়া হয়। একই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রুবেল পারভেজের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী লেনে মানববন্ধন করেন তাঁরা।

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সারি বেঁধে ১৫টি বাস রাখা আছে। বাসগুলোর কর্মচারীরা কেউ শুয়ে আছেন, কেউ আবার গাড়ি ধোঁয়ামোছা করছেন।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেলফি পরিবহনের বেপরোয়া গতি এবং চালকের সহকারীদের খারাপ আচরণ, হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি কারণে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল তাঁদের। বাসের চাপায় রুবেল পারভেজের নিহত হওয়ার পর এ ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা সেলফি পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত বাসগুলো ছাড়তে নারাজ।

সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মিলে দুই দফায় আলোচনা হলেও সমাধান হয়নি। এ কারণে আটকে রাখা ১৫টি বাস এখনো কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আছে
ছবি: প্রথম আলো

সেলফি পরিবহনের মালিকের ভাষ্য, তাঁরা বিভিন্ন সময় বাসের চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেন। তারপরও বিভিন্ন সময় খারাপ আচরণ করেন। দুর্ঘটনায় জড়িত বাসের চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ফটোকপি করে থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। একটি বাসের চালকের অপরাধে এতগুলো বাস আটকে থাকার কারণে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন, তা দিতে মালিকপক্ষ অপারগতা প্রকাশ করেছে।

সেলফি পরিবহনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে। আমরা তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছি। গতকাল আমাদের একজন মালিক আলোচনায় গিয়েছিলেন, কিন্তু সমাধান হয়নি। এখন আমরা আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা করছি। সমস্ত কর্মচারী মিলে কর্মবিরতিতে গেলে আমাদের তো আর বলার কিছু নেই। একটা বাসের অপরাধের জন্য এতগুলো বাস আটকে রাখা উচিত না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুবেল পারভেজের ১৬ মাস বয়সী সন্তান আছে, স্ত্রী আছেন। বাড়িতে মা আছেন। তাঁর ছোট ভাইয়েরা পড়াশোনা করছেন। রুবেলই পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘সবদিক থেকে বিবেচনা করে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে ওই পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছে। গতকাল আলোচনায় ভুক্তভোগী পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি স্যারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই মেনে নেবেন ভুক্তভোগী পরিবার। আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত আর সমাধান হয়নি। কারণ, একজন মালিক বা প্রতিনিধি এসেছিলেন সেলফি পরিবহন থেকে। তিনি আসলে প্রতিনিধি আবার প্রতিনিধি নন। কারণ, তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। বারবার ফোনে যোগাযোগ করছিলেন অন্য মালিকদের সঙ্গে। তাই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সমাধান হয়নি।’