‘আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সহজ-সরল ছিলেন। ভাই চেয়েছিলেন ছেলেকে কোরআনের হাফেজ বানাতে। এখন সেই ভাইও নাই, ভাতিজাও হারিয়ে গেল।’ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন নরসিংদীতে ভূমিকম্পে মারা যাওয়া দেলোয়ার হোসেনের (৪০) ভাই আনোয়ার হোসেন। এই ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. ওমর ফারুকও (১০) মারা যায়।
নিহত দেলোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌরসভার উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি নরসিংদী সরকারি আদমজী জুট মিলে উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায় পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর ছেলে ওমর নরসিংদীর একটি হাফেজি মাদ্রাসায় পড়ত।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে ভূমিকম্প শুরু হলে অন্য সবার মতো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাইরে বের হচ্ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। এ সময় পাশের নির্মাণাধীন একটি পাঁচতলা ভবনের দেয়াল ধসে তাঁদের বাসার কার্নিশের ওপর পড়ে। এতে কার্নিশসহ পাশের ভবনের দেয়ালের কিছু ভাঙা অংশ তাঁদের ওপর পড়ে। এ সময় গুরুতর আহত হন দেলোয়ার ও তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। মেয়ে দুটিকে নরসিংদী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেলোয়ার ও তাঁর ছেলে ওমর ফারুককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথে ছেলের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে দেলোয়ার মারা যান।
গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে নরসিংদীর গাবতলী এলাকার জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে দেলোয়ার ও তাঁর ছেলে ওমরের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু তাহের মোহাম্মদ সামসুজ্জামান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং এলাকাবাসী অংশ নেন।
আজ শনিবার সকালে বাবা-ছেলের মরদেহ পাকুন্দিয়ায় গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর সদরের উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজায় পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন, জামায়াত মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মোড়লসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে ভাইয়ের জন্য দোয়া কামনা করে বক্তব্য দেন দেলোয়ারের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন।
পাকুন্দিয়ার ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একসঙ্গে বাবা-ছেলের মারা যাওয়া ও দুই মেয়ের আহত হওয়ার ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে অর্থসহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।