ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠালেন তথ্য গোপন করে চাকরি নেওয়া সেই অধ্যাপক

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুতির তথ্য গোপন করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) যোগদান করা সেই অধ্যাপক অবশেষে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। কিন্তু যথাযথ নিয়ম মেনে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠাননি। ওই অধ্যাপককে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যথাযথ নিয়মে পদত্যাগপত্র পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নভেম্বর মাস থেকে তাঁর বেতন–ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত ওই অধ্যাপকের নাম এস এম নজরুল ইসলাম। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) বিভাগের অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ২৫ অক্টোবর তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এর পর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শাখা থেকে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যাপক নজরুলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুতির তথ্য গোপন করে নোয়াখালীতে যোগদান ও ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া তৃতীয় বর্ষের টার্ম পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও মডারেশনে অনুপস্থিত থাকা, প্রথম বর্ষের ক্লাস শেষ না করা এবং পরীক্ষায় পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও তা করেননি।

আরও পড়ুন

এ অবস্থায় ১১ নভেম্বর ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযোগগুলো চিঠিতে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জানানো হয়। চিঠিতে এমবিএর গবেষণাপত্র উপস্থাপনে অনুপস্থিত থাকা ও বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার অভিযোগ করা হয়।

অধ্যাপক নজরুলের চাকরিচ্যুত হওয়ার তথ্য গোপন করে নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে ১১ নভেম্বর এবং ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে ১৯ নভেম্বর প্রথম আলোয় দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক নজরুলকে সশরীর উপস্থিত থেকে ব্যাখ্যা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। যেখানে তাঁকে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরই তিনি ২১ নভেম্বর হাতে লেখা একটি পদত্যাগপত্র স্ক্যান করে রেজিস্ট্রারের দপ্তরের ই-মেইলে পাঠান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাপক নজরুলের একটি পদত্যাগপত্র তাঁর দপ্তরের ই-মেইলে এসেছে। কিন্তু যথাযথ নিয়ম মেনে পদত্যাগপত্রটি পাঠানো হয়নি। নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষক পদত্যাগ করলে বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডিনের দপ্তরের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠাতে হবে। কিন্তু অধ্যাপক নজরুল ওই নিয়ম মানেননি। তাঁকে নিয়মানুযায়ী পদত্যাগপত্র পাঠাতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো সেটি পাঠাননি।

এক প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, অধ্যাপক নজরুল যে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন, সেটি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছেন। নভেম্বর মাস থেকে তাঁর বেতন–ভাতা স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, অধ্যাপক নজরুলের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি না করে উত্তোলন করা বেতন–ভাতা বাবদ ১০ লাখ টাকার বেশি পাওনা আছে। ওই পাওনা আদায়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত তাঁর মুঠোফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, অধ্যাপক নজরুল শুধু তথ্য গোপন করেই চাকরি নেননি, একের পর এক অনিয়ম করে গেছেন। শুধু অধ্যাপক নজরুল নন, অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নেওয়া এবং বছরের পর বছর শ্রেণিকক্ষে না যাওয়া এমন অনেক শিক্ষক আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।