নরসিংদীতে ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ

মানববন্ধনের একপর্যায়ে লোকজন উত্তেজিত হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর মাধবদীতে মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে মাইশা আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার মাধবদীর শেখেরচর বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে মাইশার পরিবার, এলাকাবাসী ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনের একপর্যায়ে লোকজন উত্তেজিত হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মহাসড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করার আহ্বান জানালে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান।

আরও পড়ুন

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার শেখেরচরের কুড়েরপাড়ের জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগারের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মাইশা আক্তারকে উদ্ধার করা হয়। ওই অবস্থায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাইশা আক্তার নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুর এলাকার ডাইংশ্রমিক নেছার উদ্দিনের মেয়ে। সে মাদ্রাসায় আবাসিক ছাত্রী হিসেবে থেকে মক্তব দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করলেও শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকায় ছাত্রীর স্বজনেরা বলছেন, এটা হত্যাকাণ্ড। এর দেড় মাস আগে ১৯ অক্টোবর দুপুরে পাঠদান চলাকালে একই কায়দায় মাদ্রাসাটির আরেকটি শৌচাগার থেকে আফরিন আক্তার (১৬) নামের আরেক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মাইশার পরিবার প্রথম থেকেই বলে আসছে, এটা আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। ১০ বছরের একটি শিশু প্রায় ৭ ফুট উঁচুতে ওড়না ও গামছা দিয়ে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে এখন আত্মহত্যা বলা হচ্ছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাইশাকে হত্যা করে পুলিশ ও পরিবারকে না জানিয়ে লাশ হাসপাতালে নিয়ে এখন আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। দেড় মাস আগে এই মাদ্রাসার আরেকটি শৌচাগার থেকে ১৬ বছরের আরেকজন ছাত্রীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল। পরপর এমন ঘটনা ঘটতে থাকায় বোঝা যাচ্ছে, মাদ্রাসাটির ভেতরে অবশ্যই কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। মাদ্রাসাটি বন্ধ ঘোষণা করে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা। অন্যথায় আরও বড় পরিসরে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

মানববন্ধনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, শিশু মাইশাকে হত্যা করা হয়ে থাকলে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে পরপর দুজন ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনা তাঁকে ব্যথিত করেছে। এ ঘটনায় প্রশাসন ও পুলিশ যেন সঠিক ভূমিকা পালন করে, সে জন্য প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন মাইশার স্বজন মো. শাহাদাত হোসেন, মো. আলম মিয়া, মো. রোমান মিয়া, মো. বেলায়েত মেম্বার, মো. আল আমিন প্রধান। স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।

জানতে চাইলে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান বলেন, মাইশার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মাইশার বাবা নেছার উদ্দিন থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। তবে এখনো এই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশি তদন্তে যাঁদের নাম আসবে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।