সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ চলছে
সুন্দরবনে লাগা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৃতীয় দিনের মতো কাজ শুরু হয়েছে। আজ সোমবার ভোর থেকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলায় পানি ছিটানো শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি তাদের সহযোগিতা করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড।
বনের লতিফের ছিলা ও ড্রেনের ছিলার মাঝামাঝি এলাকায় আগুন লাগার বিষয়টি গত শনিবার নজরের আসার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে বন বিভাগ, কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপ (সিপিজি), ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), টাইগার টিমসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও বনজীবীরা। তবে ঘটনাস্থল থেকে পানির উৎস দূরে হওয়ায় এবং দুর্গম পথের কারণে প্রথম দিনে সেখানে পানি ছিটানো সম্ভব হয়নি।
গতকাল রোববার ভোর থেকে সমন্বিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা নামায় এবং নদীতে ভাটার কারণে গতকাল বিকেলে পানি দেওয়া বন্ধ করে বন থেকে বেরিয়ে আসেন সবাই। অন্ধকার ও বনের মধ্যে ঝুঁকি বিবেচনায় রাতে কাজ বন্ধ থাকার পর ভোর থেকেই আবার সবাই মিলে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছেন।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলে শুকনো পাতার পুরু আস্তরণের কারণে পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগছে। ভেতরে বড় ধরনের কোনো আগুন এখন দেখা যাচ্ছে না। যতক্ষণ ধোঁয়া থাকবে, ততক্ষণ কাজ চলবে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মোরেলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তারেক সুলতান বলেন, গতকালই সবকিছু সেট করা ছিল। ভোর থেকে পূর্ণোদ্যমে পানি দেওয়ার কাজ চলছে। আগুন আর বাড়তে পারেনি। আজকের মধ্যে ফল পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুন্দরবনের পাঁচ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিরূপণে সাত সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দোকে আহ্বায়ক করে ওই কমিটিতে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।
এই বন কর্মকর্তা বলেন, এই এলাকায় ভবিষ্যতে যাতে আর আগুন না লাগে, সে জন্য ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদী ও দুটি খাল আগামী বছর খনন করা হবে। তাহলে ওই এলাকাগুলোতে জোয়ারের পানি উঠতে পারবে। এ ছাড়া বন বিভাগের
অগ্নিনির্বাপণসামগ্রী বৃদ্ধি করা হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা হবে।
আগুনের কারণে কোনো মৃত বন্য প্রাণী দেখা যায়নি জানিয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, ৪০-৫০ বছর আগে থেকে এলাকাটা বেশি উঁচু হয়ে গেছে। নদী ও খালগুলো মরে যাওয়ায় সেখানে কোনো জোয়ার-ভাটা হয় না। যার ফলে ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, ওই এলাকার বনভূমিতে তা নেই। শুধু বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার ভূমি কিছু পানি পায়। সারা বছর গাছের পাতা পড়ে প্রচুর হিউমাস তৈরি হয়। যার ফলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে শুষ্ক মৌসুমে সেখানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।