উপাচার্যের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার, রোববার থেকে ক্লাসে ফিরবেন শিক্ষার্থীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আগতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা ভবন বি-এর সামনে
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা গত সোমবার থেকে ক্লাস বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভবন ‘বি’-এর সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৬ জুলাই তাঁদের প্রথম সেমিস্টারের গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র বিষয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। কিন্তু এর আগে তাঁদের এক সহপাঠী গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ অবস্থায় তাঁর পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যেহেতু ওই সহপাঠী পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাই তাঁর অসুস্থতায় মানবিক দিক চিন্তা করে সহপাঠীদের কেউই ওই দিন পরীক্ষায় বসতে রাজি হননি। বিষয়টি তাঁরা বিভাগীয় প্রধানকে জানান। পরে এ পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ওই শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্টদের কাছে জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের সেমিস্টারে মোট ৫৫ জন শিক্ষার্থী আছেন।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৭৩তম সভায় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় ওই কোর্স তাঁদের ‘ড্রপ’ হয়ে যাবে এবং পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে তাঁদের এ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এতে গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হলে এসব শিক্ষার্থীর ফাইনাল পরীক্ষা শেষেও অতিরিক্ত আরও অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। তাই তাঁদের শিক্ষাজীবনে জট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এরপরই পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে সোমবার অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা চলমান অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। সেখানে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কয়েকটি প্রস্তাব দেন।

উপাচার্যের দেওয়া প্রস্তাবগুলো হচ্ছে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে আগের সেমিস্টারে পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া বিষয়ের পরীক্ষা হবে; ওই বিষয়ের পূর্ববর্তী ক্লাস ও মিডটার্মের ৪০ নম্বর অব্যাহত থাকবে; অতিরিক্ত কোনো ক্লাস, মিডটার্ম কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে না; দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রয়োজনমাফিক অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দেওয়া হবে; ড্রপ কোর্সের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে; শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে একদিনের মধ্যে সনদ দেওয়া হবে; অসুস্থ শিক্ষার্থীর সব ধরনের চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হবে এবং নিয়মের ভেতরে থেকে শিক্ষার্থীদের যেকোনো দাবি পূরণ করা হবে।

উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ নিজেদের মধ্যে প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। পরে আজ বেলা চারটার দিকে শিক্ষার্থীদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ফের উপাচার্যের কাছে যান এবং তাঁদের পুনর্ভর্তি মওকুফসহ বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের এসব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা চলমান অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে তাঁরা আগামী রোববার থেকে ক্লাসে ফেরারও ঘোষণা দেন।

পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলে থাকা শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু উপাচার্য আন্তরিকভাবে আমাদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন, তাই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার থেকে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন।’