সংসদ সদস্য রেজাউল করিমকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা, কুশপুত্তলিকা দাহ

সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুকে অবাঞ্চিত ঘোষণার আগে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সেই সঙ্গে সংসদ সদস্য রেজাউল করিমের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন তাঁরা।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব হোসেনের দিকে বন্দুক তাক করে হত্যার হুমকি এবং যুবলীগ নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে মাঝিড়া বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সেখান থেকে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ছাড়াও তাঁর বন্দুকের লাইসেন্স বাতিল এবং অবৈধভাবে অর্জিত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে রেজাউল করিমের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

আরও পড়ুন

সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলাম বলেন, রেজাউল করিম একজন প্রতারক। ভাগ্যের ফেরে সংসদ সদস্যের চেয়ার পেয়ে প্রকল্প বেচাকেনার ব্যবসা খুলেছেন। দুর্নীতি করে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে বন্দুকের লাইসেন্স নিয়ে রীতিমতো মাস্তানি শুরু করেছেন। বন্দুক হাতে তোলা ছবি ফেসবুকে দেওয়ার পর এখন সেই অস্ত্র দিয়ে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাদের হত্যাচেষ্টায় নেমেছেন। তাঁর বন্দুকের লাইসেন্স বাতিল ও অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। আজ থেকে শাজাহানপুর উপজেলায় তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সেখানে গিয়ে যুবলীগ নেতাদের পক্ষ নিলে সংসদ সদস্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম পকেট থেকে বন্দুক বের করেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বগুড়া পৌর সভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আবদুল খালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাছির উদ্দীন, মাহফুজার রহমান, জহুরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মোল্লা, জুলকার নাইম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবু জাফর সিদ্দিক, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সুলতান আহমেদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবের নিরাপত্তা বিষয়ে গত বুধবার সকালে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ডাকা হয়। সংসদ সদস্য রেজাউল করিম এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন দুজনই এই কমিটির উপদেষ্টা। কমিটির সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদের আমন্ত্রণে সভায় যোগ দিতে সকাল ১০টার দিকে পরিষদে যান সংসদ সদস্য। তাঁকে দেখেই তেড়ে আসেন উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বাদশা। প্রকল্প দেওয়ার কথা বলে সংসদ সদস্য টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করেন আলমগীর। একপর্যায়ে সংসদ সদস্যের শ্যালক ও ব্যক্তিগত সহকারী রেজা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি হয়।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সেখানে গিয়ে যুবলীগ নেতাদের পক্ষ নিলে সংসদ সদস্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম পকেট থেকে বন্দুক বের করেন। যুবলীগ নেতাদের দাবি, রেজাউল করিম বন্দুক বের করে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ যুবলীগ নেতাদের ভয় দেখান।

সোহরাব হোসেনের অভিযোগ, আলমগীর বাদশার কাছে ঘুষ নিয়েও টিআর-কাবিখা প্রকল্প দিতে টালবাহানা করছেন সংসদ সদস্য রেজাউল করিম। টাকা ফেরত চাওয়ায় আলমগীর বাদশার ওপর হামলা করেন রেজাউল করিমের শ্যালক। আলমগীরকে রক্ষা করতে গেলে রেজাউল করিম পকেট থেকে বন্দুক তাক করে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

তবে সংসদ সদস্য রেজাউল করিমের দাবি, ‘আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগ দিতে গেলে যুবলীগ নেতারা তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় নিজের আত্মরক্ষার জন্য পকেট থেকে লাইসেন্স করা বন্দুক বের করেন তিনি। তবে বন্দুক উঁচিয়ে কাউকে মেরে ফেলার হুমকি দেননি।’