কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডী উপকূলের মানুষ পেলেন খাদ্যসহায়তা

আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের হাতে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি তুলে দিচ্ছেন বন্ধুসভার সদস্যরা। রোববার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের দুর্গম চৌফলণ্ডী উপকূলের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডীতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দুটি আশ্রয়কেন্দ্রের দেড় শতাধিক পরিবারের মধ্যে চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, মোমবাতি, গ্যাস লাইট ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে—এমন শঙ্কায় গত শনিবার বিকেল ৫টা থেকেই অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। গতকাল সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূল অতিক্রম করা পর্যন্ত চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন চার হাজারের বেশি মানুষ। বেশির ভাগ নারী ও শিশু। ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্নাবান্নার ব্যবস্থাও ছিল না। বৈরী পরিবেশে আশপাশের দোকানপাট-রেস্তোরাঁ বন্ধ হওয়ায় আশ্রিত লোকজন খাদ্যসংকটে ভুগছিলেন।

খবর পেয়ে প্রথম আলোর কক্সবাজার বন্ধুসভার সদস্যরা শুকনা খাবার নিয়ে ছুটে যান চৌফলদণ্ডী উপকূলের দিকে। প্রথমে সাগর মনি উচ্চবিদ্যালয়ে খাবার বিতরণ করা হয়। সেখানে আশ্রিত ৭৫টি পরিবারে বিতরণ করা হয় চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, মোমবাতি, গ্যাস লাইট ও বিশুদ্ধ পানি। এরপর পাশের চৌফলদণ্ডী দক্ষিণ রাখাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রিত আরও ৭৫ পরিবারে খাবার বিতরণ করা হয়।

আরও পড়ুন

চৌফলদণ্ডীর বেড়িবাঁধের কাছে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে থাকেন আবুল হাশেম। পেশায় তিনি জেলে হলেও এলাকার মাঠে দুই মাস ধরে লবণ উৎপাদনের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাগর উত্তাল হলে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তিনিও পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে সাগর মনি উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আসার সময় ঘর থেকে যে পরিমাণ শুকনা খাবার নিয়ে এসেছিলেন, তা রোববার দুপুরে শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত অভুক্ত ছিলেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। আশপাশের দোকানপাটও বন্ধ ছিল। এমন মুহূর্তে প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসহায়তা বড় উপকারে আসে।

চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের চারদিকে অন্তত পাঁচ হাজার একর লবণ চাষের জমি। ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লবণ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। সাগর মনি উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবারের চারজন নিয়ে এসেছিলেন চৌফলদণ্ডী গ্রামের লবণশ্রমিক মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, শনিবার বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যখন কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়, তখনই ঘরের সবকিছু ফেলে তিনি সবাইকে নিয়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে আসেন। এমন বিপদের সময়ও বন্ধুসভার সদস্যদের দুর্গম উপকূলে পৌঁছাতে দেখে তিনি অবাক হন। ত্রাণ পেয়ে খুশি তিনি।

ত্রাণ পেয়ে দক্ষিণ রাখাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে ভাত রান্না করার ব্যবস্থা ছিল না। ছেলেমেয়েসহ অনেক শিশু-কিশোর অভুক্ত। প্রথম আলোর চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট অনেক কাজ দেবে।’

আরও পড়ুন

ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার গোলাম রব্বানী, প্রথম আলো কক্সবাজার বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভার সভাপতি মারুফ রশিদ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ বন্ধুসভার সভাপতি শফিকুল মোস্তফা প্রমুখ। বন্ধুসভার সদস্যরা জানিয়েছেন, আজ দুপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে টেকনাফের দুর্গত এলাকায় অসহায় লোকজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।