পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ৮ দফা দাবি জানিয়ে আবার নার্সদের কর্মবিরতি

আজ দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ইন্টার্ন নার্সরা
ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে এক ইন্টার্ন নার্সকে মারধরের ঘটনায় আবার কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন ইন্টার্ন নার্সরা। আজ বুধবার সকালে তাঁরা হাসপাতালে এলেও কাজে যোগ দেননি। পরে দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে আট দফা দাবি জানিয়ে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাদ্দাম হোসেন (৩০) নামের এক দালালের বিরুদ্ধে এক ইন্টার্ন নার্সকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। মারধরের শিকার ইন্টার্ন নার্সের নাম রাজা হোসেন (২৫)। তিনি শহরের ইছামতী নার্সিং কলেজের ডিপ্লোমা ইন সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি বিষয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্ন করছেন রাজা। মারধরের ঘটনায় প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন ইন্টার্ন নার্সরা। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন।

আরও পড়ুন

আন্দোলনরত ইন্টার্ন নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মবিরতি শেষে গতকাল রাতে ইন্টার্ন নার্সরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তবে আজ সকালের মধ্যে সাদ্দাম হোসেনকে আটক করতে না পারায় তাঁরা সকাল থেকে আর কাজে যোগ দেননি। বেলা ১১টার দিকে তাঁরা হাসপাতাল ছেড়ে বাইরে এসে অবস্থান নেন। এরপর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত চলা কর্মসূচি থেকে ইন্টার্ন নার্সরা আট দফা দাবি জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।

কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট নার্সেস ইউনিয়ন পাবনা জেলা শাখার সভাপতি জাহিদ হাসান বলেন, ‘দালালদের কারণে আমরা হাসপাতালে কোণঠাসা হয়ে পড়েছি। একটু কিছু হলেই তাঁরা বকাবাদ্য–মারপিট করেন। এটা আর মেনে নেওয়া হবে না। হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে হবে।’

ইন্টার্ন নার্সকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন
ছবি: হাসান মাহমুদ

কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম বলেন, দালালেরা স্থানীয় বাসিন্দা। ফলে সব সময় তাঁরা দাপটের সঙ্গে চলেন, প্রভাব খাটিয়ে রোগীদের হয়রানি করেন। তাঁদের কিছু বলতে গেলেই নার্সদের লাঞ্ছিত করা হয়। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আট দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে।

আট দফা দাবিগুলো হলো অভিযুক্ত সাদ্দাম ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার, হাসপাতালে নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নার্সদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, দালাল চক্র বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নার্সদের সঙ্গে অন্য কর্মকর্তাদের ভালো ব্যবহার করা, নার্সদের অবহেলা না করে নার্স বলে সম্বোধন করা, দালালের মাধ্যমে ইসিজিসহ অন্য যেকোনো যন্ত্রপাতি হাসপাতালে প্রবেশ না করা, হাসপাতালের আয়া–ওয়ার্ড বয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড (পোশাক) মেনে চলা।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক মীর বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা ইন্টার্ন নার্সদের সঙ্গে আলোচনা করছি। এ ঘটনায় মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্দু বালা বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। দ্রুতই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশা করছেন তিনি।