মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা পাথরধুলা ‘বিশেষ বিবেচনায়’ খালাসের অনুমোদন

বন্দর দিয়ে পাথর চূর্ণ আমদানির কথা বলে ২ হাজার ৭০০ টন পাথর ধুলা (ডাস্ট) আমদানি করা হয়। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পাথরচূর্ণ বা ব্রোকেন অর ক্রাস্টড স্টোনের কথা বলে আনা পাথরধুলা (ডাস্ট) ‘বিশেষ বিবেচনায়’ খালাসের অনুমতি পেয়েছে। বন্দরে আটকে থাকার ২ মাস ১০ দিন পর গতকাল সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ২৪টি ট্রাকে ৭৭০ টন পাথরধুলা (ডাস্ট) খালাস করা হয়েছে।

স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড গত ১৩ নভেম্বর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ৪০০ টন ‘পাথরচূর্ণ’ আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটি কয়েক দফায় বন্দরে ২ হাজার ৭০০ টন পাথরচূর্ণ আমদানি করে এনে বন্দরে রাখে। ঋণপত্রে পাথরচূর্ণ আমদানির কথা বলে পাথরের ধুলা (ডাস্ট) আনায় তা খালাসের অনুমতি দেয়নি আখাউড়া শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ওই পণ্য ২ মাস ১০ দিন আখাউড়া স্থলবন্দরে আটকা পড়ে। বন্দরে পণ্য রাখার কারণে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন মাশুল হিসেবে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা দিতে হয়।

এ ঘটনায় এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স খলিফা এন্টারপ্রাইজকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশে বলা হয়, ঘোষিত পণ্য পাথরচূর্ণের (ব্রোকেন ডাস্ট অর ক্রাস্ট স্টোন) সঙ্গে বন্দর দিয়ে আসা পণ্যের কোনো মিল পাওয়া যায়নি, যা কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯–এর ধারা ৩২ মোতাবেক মিথ্যা ঘোষণার অপরাধের আওতায় পড়েছে। 

আরও পড়ুন

আখাউড়া শুল্ক স্টেশনের ডেপুটি কমিশনার আবু হানিফ মো. আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, পাথর এই বন্দর দিয়ে আমদানিযোগ্য। তবে পাথরের এই আইটেম (পাথরধুলা বা ডাস্ট) আমদানির অনুমোদন নেই। এটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য আমদানি করা হয়েছে এবং কাস্টমসের শর্ত অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এরকম ক্ষেত্রগুলো বিবেচনা করার সুযোগ দেওয়া আছে। তাই রাজস্ব বোর্ড থেকে বিশেষ ক্ষেত্রে বিবেচনায় সরকারি প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এই ধরনের পণ্য খালাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২ হাজার ৭০০ টন পাথরের ধুলার মধ্যে ৭৭০ টন খালাসের অনুমোদন দিয়েছে এনবিআর।

স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, পণ্যের দামের দ্বিগুণের বেশি মাশুল দিয়ে পণ্য খালাস করতে হয়েছে। প্রতি টন পাথরধুলা ১৩ ডলার দামে কেনা হয়েছে। সেই হিসেবে (প্রতি ডলার ১০০ টাকা ধরে) ৭৭০ টন পাথর ধুলার দাম প্রায় ১০ লাখ ১ হাজার টাকা। বিপরীতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ টাকা মাশুল দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার ২৪ টি ট্রাকে ৭৭০ টন পাথরধুলা খালাস করা হয়েছে। ৭৭০ টন পণ্যের জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ টাকা মাশুল দিতে হয়েছে।

মেসার্স খলিফা এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মোজাম্মেল হক বলেন, আখাউড়া বাদে অন্যান্য বন্দর দিয়ে এই পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে কোনো নিষেধ নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলেছিল, তারা ছাড়পত্র দেবে। পরে ছাড়পত্র আনতে গেলে তারা পণ্য জব্দ করে। তাহলে প্রথমে কেন বলা হলো না এই পণ্য আনা যাবে না?

আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৭৭০ টনের একটি চালান খালাসের অনুমোদন পেয়েছি। মোট পণ্য এসেছে ২ হাজার ৭০০ টন। বাকি পণ্য খালাসের অনুমোদনের চেষ্টায় দৌড়ঝাঁপ করছি।’