বগুড়া আইএইচটির শিক্ষার্থীরা ১৫ দিন পর ক্লাসে

বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেন। গত ২৯ আগস্ট ইনস্টিটিউটের সামনে শেরপুর সড়কে
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থীদের নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার এবং অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিনকে বদলির পর শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন। তিন দফা দাবি আদায়ে ১৫ দিন ধরে আন্দোলন শেষে আজ বুধবার সকালে তাঁরা শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করেন।

আন্দোলনকারী ও আইএইচটির ফিজিওথেরাপি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার, অযোগ্য অধ্যক্ষকে প্রত্যাহার এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তিন দফা দাবিতে ২৯ আগস্ট থেকে ক্লাস বর্জন করে আমরা লাগাতার আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের মুখে ইতিমধ্যে সজল কুমারকে গ্রেপ্তার এবং অধ্যক্ষকে বাগেরহাটে বদলি করা হয়েছে। প্রধান দুই দাবি পূরণ হওয়ায় আজ সকালে থেকে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরেছি।’

আরও পড়ুন

বগুড়া আইএইচটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুক মীর আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রধান দুটি দাবি পূরণ হওয়ায় তারা আজ শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসবে। তাঁদের সমস্যা চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। আগামী রোববার থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আন্দোলনে দুই সপ্তাহ সময় চলে গেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে সময় অনেক কম। এ কারণে বুধ ও বৃহস্পতিবার ক্লাস স্থগিত করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ছনকা বাজার এলাকা থেকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজল কুমার ঘোষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এর আগে গত সোমবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিনকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে বাগেরহাট ম্যাটসের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়। অন্যথায় অষ্টম কর্মদিবসে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ বলে গণ্য হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বগুড়া আইএইচটির সিনিয়র লেকচারার ওমর ফারুক মীরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট থেকে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিন।
এদিকে বগুড়া আইএইচটির ঘটনায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইএইচটির ছাত্র না হয়েও এক যুগ ধরে অবৈধভাবে ছাত্রাবাসের ২১৮ নম্বর কক্ষ দখল করে রেখেছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল কুমার ঘোষ। শিক্ষার্থীদের মারধর, হলে সিট-বাণিজ্য, মাদকসেবন এবং পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা জোর করে আদায় করেন সজল। গত ২৯ আগস্ট বিকেল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। ২ সেপ্টেম্বর সজলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন শাহরিয়ার নামের নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থী।