শিহাবের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে যা উঠে এল

শিহাব কবির নাহিদ

কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যে গত সোমবার নিহত হন শিহাব কবির নামের এক যুবক। এলাকাবাসী ও পরিবারের দাবি ছিল গুলিতে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদনে গুলির কথা উল্লেখ নেই।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে সোমবার বিকেলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ আলী উদ্দিন। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত শিহাব কবিরের মাথার খুলিতে গভীর গর্ত দেখা গেছে। তাঁর মাথার মগজ সম্পূর্ণ বের হয়ে আসে। কপাল রক্তাক্ত-স্বাভাবিক, ডান চোখ ছিল অর্ধেক খোলা অবস্থায় এবং বাম চোখ ছিল বন্ধ। প্রতিবেদনে গুলির উল্লেখ নেই। এই সুরতহাল প্রতিবেদনে সাক্ষী হিসেবে নিহত শিহাবের মা ও বাবার নাম এবং স্বাক্ষর রয়েছে।

সুরতহাল প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, লাশ যেভাবে দেখা গেছে, সুরতহাল প্রতিবেদনেও বিষয়টি সেভাবেই উঠে এসেছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাবোক্তগীন মাহমুদ বলেন, সোমবার দুপুরে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিহাবের মৃত্যু হয়। আঘাতে তাঁর মাথার পেছনের অংশ (খুলি) উড়ে গেছে। গুলিতে নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মাথার ওই জখম, তা ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমিতিপাড়ার পাশে বিমানবাহিনীর একটি তল্লাশিচৌকিতে হেলমেট পরা নিয়ে কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ হোসেন নামের এক তরুণের সঙ্গে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে জাহেদকে আটক করে ব্যারাকে নেওয়া হলে জাহেদের আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তাতে দুই পক্ষে সংঘর্ষ লেগে যায়। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা ধরে চলা ওই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় গুরুতর আহত হন শিহাব কবির। স্থানীয় লোকজন শিহাবকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহত শিহাবের স্বজনদের ভিড়। গত সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ঘটনার বিবরণ দিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘কক্সবাজারের সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। বিয়াম স্কুলের পাশে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট থেকে স্থানীয় এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ঘাঁটির ভেতরে নেওয়া হয়। এ সময় সমিতিপাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বাধা দেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমানবাহিনীর সদস্য ও সমিতিপাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা বিমানবাহিনীর সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমানবাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমানবাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে শিহাব মৃত্যুবরণ করেন।’

আরও পড়ুন

নিহত শিহাব কক্সবাজার পিটিআইয়ের সাবেক সুপার মো. নাছির উদ্দিনের ছেলে। মা আমেনা খাতুন কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। থাকেন সমিতিপাড়ায়। তাঁদের সংসারে চার মেয়ে এক ছেলে। একমাত্র ছেলে শিহাব ব্যবসার পাশাপাশি জেলা আদালতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। সংসারে স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী এক সন্তান রয়েছে তাঁর।