যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবার পরাজিত হয়েছেন। তিনি এই আসনে ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম ইয়াকুব আলীর কাছে তিনি হেরে গেছেন। ইয়াকুব আলী ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৪৬৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বপন ভট্টাচার্য পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৩২ ভোট।
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ইয়াকুব আলী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের দুই মেয়াদে মনিরামপুরে কোনো কাজে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীদের কোনো স্থান ছিল না। তাঁরা ছিলেন অবহেলিত। প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের পছন্দের বাইরে পাঁচ বছরে মনিরামপুর উপজেলার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ নিয়োগ পাননি। তিনি ও তাঁর স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন।
নেতারা জানান, মনিরামপুরে জামায়াত-বিএনপিকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং তাঁদের লালন-পালন করেছেন স্বপন ভট্টাচার্য। এ ছাড়া ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম-টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) প্রকল্প যাতে পাস না হয়, সেই ব্যবস্থা করে জলাবদ্ধ মানুষদের স্বার্থবিরোধী সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহ এলাকার নদী খননের নামে কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরেছেন। ভবদহের নদী খননকাজ ছিল প্রতিমন্ত্রীর ছেলের কবজায়।
স্বপন ভট্টাচার্যের পরাজয়ের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে হরিহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, সীমাহীন দুর্নীতি, নামমাত্র কাজ করে ভবদহের কোটি কোটি টাকা লুটপাট, দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন, বিশেষ করে নাশকতা মামলার আসামিদের চাকরি প্রদান, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে, বিশেষ করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীকে সঙ্গে সম্পর্কহীনতা এবং নিজের স্ত্রী, ছেলে আর ভাগনের একটা বলয় তৈরি করে একটি সিন্ডিকেট বানিয়েছিলেন তিনি।
মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, স্বপন ভট্টাচার্য মনিরামপুরে যেসব উন্নয়ন করেছেন বলে বেড়ান, তা রাষ্ট্রের উন্নয়নের গতানুগতিক কাজ। এবার মনিরামপুরবাসী পরিবর্তন চেয়েছিলেন। পরিবারতন্ত্র, নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করা, মানুষের ঘের দখল, টেন্ডারবাজি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভাগনের সরকারি চাল চুরি, নিয়োগবাণিজ্য এবং দুর্নীতি ছিল প্রতিমন্ত্রীর পরাজয়ের কারণ। মনিরামপুরের মানুষ এসব পছন্দ করেননি। এ ছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন তিনি। সাধারণ ভোটাররা সেসব ক্ষোভেরই রায় দিয়েছেন।
ইয়াকুব আলীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জি এম আবদুল মজিদ বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা প্রতিমন্ত্রীর কাছে অত্যাচার ও অবহেলার শিকার হয়েছেন।
নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি, মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, কিছু দলীয় নেতা এবার নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। তাঁরা নৌকায় ভোট দেননি। তা ছাড়া সাংগঠনিকভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট করার বিষয়ে কোনো বাধা ছিল না। ভোটের দিন বিএনপি-জামায়াতের লোকজনও ভোট দিয়েছেন। সংগত কারণে তাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন না। প্রতিমন্ত্রী, তাঁর স্ত্রী, ছেলে, ভাগনে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করে নিয়োগবাণিজ্য করেছেন, দলের লোকজনকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন—এসব অভিযোগ মোটেও সত্য নয়।